আমরা কি বিষ পান করছি?

পানির অপর নাম জীবন। সুস্থ থাকার জন্য একজন মানুষকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হয়। আজকাল বাসা-বাড়িতে সবাই পানি ফুটিয়ে পান করে। ওয়াসার পানির ওপর আর ভরসা রাখা যায় না। রাজধানীতে ওয়াসার পানি দূষিত_এ নিয়ে খোদ ওয়াসারও বোধ হয় দ্বিমত নেই। জীবন বাঁচাতে পানি পান করতেই হবে।


তাই সচেতন মানুষ বাড়িতে পানি ফুটিয়ে পান করা শুরু করলে পানি নিয়ে শুরু হয় নতুন এক ব্যবসা। বোতলজাত পানি ব্যবহার শুরু করে মানুষ। এরপর শুরু হয় বড় বড় জারে পানি সরবরাহের ব্যবসা। 'ফিল্টার পানি' নামের এই পানি যায় বিভিন্ন অফিসে, যায় বড় বড় হোটেলে, চাইনিজ রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে ফুটপাতের চায়ের দোকানেও। যেহেতু মানুষ সচেতনভাবেই এই পানি পান করছে, তাই মানুষের এই সচেতনতাকেই পুঁজি করেছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। 'ফিল্টার' পানির নামে ওয়াসার দূষিত পানিই জারে ভরে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। সেই পানি পান করে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়। বাড়ছে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। ৯ মাসে ৭৮টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করার পরও অসাধু ব্যবসায়ীরা ঘুরেফিরে আবার এই পানি সরবরাহের ব্যবসায় চলে আসছে।
এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীর অধিক মুনাফার লোভ সাধারণ মানুষের জীবনকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে। পানি বাজারজাত করার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। পানি বোতলজাত করার আগে পানি বিশুদ্ধ করার জন্য কতকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। একটি পানি বিশুদ্ধকরণ ফ্যাক্টরিতে অবশ্যই থাকতে হবে শোধন সরঞ্জাম, থাকতে হবে কারখানার নিজস্ব ল্যাবরেটরি_পানি পরীক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা। কিন্তু রাজধানীর অধিকাংশ পানি প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো ল্যাবরেটরি নেই, নেই প্রশিক্ষিত কেমিস্ট। নেই শোধনযন্ত্রও। এসব কারখানায় সরাসরি ওয়াসার লাইন থেকে জারে পানি ভরে তা বাজারে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো কারখানায় জারে পানি ভরার আগে তা ছেঁকে নেওয়া হয়। অনেক কারখানা মালিক সেটাও করেন না। মানুষ সরল বিশ্বাসে এই পানি পান করে অসুস্থ হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়সহ পানিবাহিত নানা রোগে। এসব অসাধু প্রতিষ্ঠানের কারণে অনেক ভালো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পানির মান নিয়ন্ত্রণের জন্য আইএসও সনদ মেনে লাইসেন্স নিতে হয়। পানি শোধন করতে হয় নিয়ম মেনে। সে ক্ষেত্রে এক জার পানি তৈরি করতে যে খরচ হয়, সেই দামের চেয়ে কম দামে অনেক প্রতিষ্ঠান বাজারে পানি সরবরাহ করে থাকে। ফলে এই পানির চাহিদাও বেশি।
অসাধু পানি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরও আবার তারা ঘুরেফিরে এই ব্যবসায় আসছে। পানির নামে বিষ তুলে দেওয়া হচ্ছে ভোক্তাদের মুখে। এদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ওয়াসা, বিএসটিআই এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে। বাজারে সরবরাহ করা পানি যাতে মানসম্মত ও নিরাপদ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.