সরকারের অসহযোগিতায় চালু হচ্ছে না কেইপিজেড!

সরকারের অসহযোগিতা এবং নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরু করা যাচ্ছে না বলে বেসরকারিভাবে নির্মিত কর্ণফুলী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, সরকারের একজন ‘দায়িত্বশীল ব্যক্তি’ সম্প্রতি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কেইপিজেডের অগ্রযাত্রার বিষয়ে ‘অসহযোগিতা’ করছেন।

গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামে কর্মরত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার সময় কেইপিজেডের কর্মকর্তারা এই অভিযোগ তোলেন। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁদের খোলামেলা আলোচনা হয়। এতে গত ১৩ বছরেও অবকাঠামো নির্মাণ না হওয়া এবং পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা উঠে আসে। একইভাবে পরিবেশ আইন অমান্য করে পাহাড় কাটার বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পায়।
কেইপিজেডের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে এটি একমাত্র বেসরকারিভাবে নির্মিত রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, যার উদ্যোক্তা কোরিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইয়ং ওয়ান গ্রুপ। সরকারের অনুমতি নিয়ে ১৩ বছর আগে কেইপিজেডের কার্যক্রম শুরু হয়। কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী আনোয়ারা উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার একর পাহাড়ি জমিতে এটির অবস্থান। পাহাড় কাটা নিয়ে সাত বছর পরিবেশবিষয়ক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও অনুমতি নিয়ে পাহাড় ‘মোচনের’ কাজ চলছিল বলে কর্মকর্তারা দাবি করেন।
পাহাড় কেটে শিল্প প্লট তৈরি প্রসঙ্গে কেইপিজেডের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা তো কুটিরশিল্প তৈরির জন্য করা হয়নি। যদি তা-ই হতো, তাহলে আমরা পাহাড় মোচন করে অপরাধ করেছি। ভারী শিল্প-কারখানা তৈরি করা হবে বলে সরকার এটিকে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। আর ভারী শিল্পের প্লট তৈরির জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের শর্তাবলী মেনেই কিছু উঁচু পাহাড় মোচন করা হয়েছে।’
ব্রিগেডিয়ার হাসান নাসির আরও বলেন, ‘ভারী শিল্প-কারখানার জন্য সমতল প্লটের প্রয়োজন আছে। তবে পাহাড় কেটে মাটি সরানোর অভিযোগ অসত্য। আর পাহাড় মোচন যদি না করতে পারি, তাহলে এই এলাকায় ইপিজেড করার অনুমতি দেওয়া উচিত ছিল না।’
প্রসঙ্গত, গত ২২ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর নেতৃত্বে কেইপিজেডে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় তিনি কেইপিজেডের পাঁচটি স্থানে পাহাড় কাটার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। পরে তিনি কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেন।
মুনীর চৌধুরী ওই সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ পাহাড়ের উচ্চতা হ্রাস করেছে। এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আমরা শিল্প উন্নয়নের বিপক্ষে নই। কিন্তু তা প্রচলিত আইন মেনে হওয়া উচিত।’
কেইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক কর্নেল (অব.) মো. শাহজাহান সাংবাদিকদের জানান, ইতিমধ্যে ২১ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছে। ইয়ং ওয়ান গ্রুপ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দুটি কারখানা চালু করেছে, যেখানে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কাজ করছেন। কিন্তু জমির নামজারি না হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে পারছেন না। পাশাপাশি বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সরবরাহ নেই। সরকারের সহযোগিতা পাওয়া গেলে বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যাও কেটে যাবে।
কেইপিজেডের উন্নয়নে বাধা কারা, জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার হাসান নাসির কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
কর্নেল (অব.) শাহজাহান বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজের পর বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সরবরাহ দেওয়া হলে দেড় লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে এই অঞ্চলে। জাপানের একটি বড় কোম্পানি সোলার প্যানেল বানানোর জন্য কেইপিজেডে কারখানা স্থাপনের আগ্রহ দেখিয়েছে। নানা জটিলতার কারণে তা আপাতত হচ্ছে না।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, সরকারের নানা শর্ত মেনে কাজ করার পর নতুন নতুন বাধা মোকাবিলা করছে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন শর্তের কারণে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এজন্য সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক ব্যক্তি দায়ী বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর কারণেই নতুন শর্ত আরোপ হচ্ছে, যা প্রতিবন্ধকতা ছাড়া আর কিছু নয় বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। তবে কেইপিজেডের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন।

No comments

Powered by Blogger.