জেলা পরিষদে নির্বাচন হোক

দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থা অপরিহার্য। সাংবিধানিকভাবেও সরকারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এ বিষয়ে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা সংবিধানেও স্পষ্টভাবে বলা আছে। সংবিধানের ১১ এবং ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা।


সরকারও এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে_এমনটাই প্রত্যাশা ছিল, যার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের বিভিন্ন পৌরসভায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই উদ্যোগ তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ এবং তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের শাসন প্রসারে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। কিন্তু স্থানীয় সরকারের অংশ হিসেবে জেলা পরিষদ গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত এদিকে কোনো সরকারই নজর দেয়নি। বলা হয়ে থাকে, আমলাদের অধিকতর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার প্রবণতাই জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে বড় বাধা। অন্যদিকে স্থানীয় এমপিদের অনেকেই চান না, তাঁদের জেলা শহরগুলোতে জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সেখানে তাঁদের আশঙ্কা, দ্বৈত ব্যবস্থা কার্যকর হবে। যাঁরা এমনটি মনে করেন, তাঁরা আবার উপজেলা পরিষদের উদাহরণকে সামনে আনছেন। উপজেলা পরিষদ আর স্থানীয় এমপির মধ্যে যে মতভেদ সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাঁদের মতে, জেলা পরিষদের নির্বাচন হলে সেখানেও তেমনই অসুবিধার সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ সবখানে যে ক্ষমতাই মূল বিষয়, তা স্পষ্ট।
বর্তমান সরকার স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার পরও কী কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি এখন পর্যন্ত তা বোঝা মুশকিল। তার মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনের কথা প্রথমেই উল্লেখ করার মতো। এরপরই আসে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। জেলা পরিষদের নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের আদৌ ইচ্ছা আছে কি না, তা প্রতিটি সরকারের সময়ই সন্দেহ পোষণ করা হয়। কিন্তু এবার যখন সরকার ঘোষণা দিয়েছে_জেলা পরিষদগুলোতে জেলা প্রশাসকদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তখন এই সন্দেহ আরো ঘনীভূত হলো। স্পষ্টতই মনে করা যায়, জেলা পরিষদগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সরকার ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অথচ জেলা পরিষদগুলোতে নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় সরকারের বরাদ্দও অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। ফলে গত বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের বিরাট অংশই এবার ফেরত যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে সাময়িক উত্তরণের জন্য সরকার জেলা প্রশাসকদের জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একে আর যা-ই বলা হোক, গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য শুভ বলার সুযোগ নেই।
জেলা প্রশাসকদের জেলা পরিষদের দায়িত্ব দেওয়া হলে কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি অসুবিধায় পড়তে হবে। বিশেষ করে যেসব জেলায় জেলা প্রশাসকের চেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তারা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন, সেখানে কাজের সমন্বয়হীনতা দেখা দেবে। কারণ সিনিয়র কর্মকর্তা জুনিয়রের নির্দেশ পালন করতে পারবেন কি? এ ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের উন্নয়নকাজে স্থবিরতা নেমে আসতে পারে। পাশাপাশি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে আমলানির্ভরতা উন্নয়ন কর্মসূচিকে ব্যাহত করবে। এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে হলে উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের মতো জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.