কৃচ্ছ্রসাধনের আহ্বান-আপনি আচরি ধর্ম...

আপনি আচরি ধর্ম_ বাংলায় জনপ্রিয় প্রবাদ। অর্থনীতিতে সংকট দেখা দিলে তা থেকে উত্তরণের জন্য যেসব উপায় বাতলানো হয়, তার মধ্যে কৃচ্ছ্রসাধনের বিষয়টি থাকেই। সেটি সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন ব্যয়ের ক্ষেত্রে হতে পারে, উন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রেও হতে পারে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধার কিছু কাটছাঁটও করা যেতে পারে।


২ মার্চ সমকালের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল 'সংকট মোকাবেলায় কৃচ্ছ্রসাধন'। এতে বলা হয়, সরকারি খাতে ভ্রমণ ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা ও জ্বালানিসহ আরও কিছু খাতে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অপরিহার্য না হলে নতুন লোক নিয়োগ নিরুৎসাহিত এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকি কমানো হবে। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি উচ্চপর্যায়ের এক সভায় ৪৬ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে 'অর্থনীতির ঝুঁকি কেটে গেছে'_ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর এ ঘোষণা ঠিক মেলানো যায় না। ঝুঁকি কেটে গেলে কৃচ্ছ্রসাধনের পদক্ষেপ গ্রহণ কেন অপরিহার্য হয়ে পড়ছে, সেটা অনেকের কাছে বোধগম্য না-ও হতে পারে। আমরা সবাই জানি, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। জ্বালানি তেলের দাম চড়া এবং আমাদের চাহিদার প্রায় পুরোটা আমদানি করে মেটাতে হয়। কয়েক ধরনের ভোগ্যপণ্যেও আমদানিনির্ভরতা প্রকট। আন্তর্জাতিক বাজারে এ ধরনের প্রবণতা সরকারের বাজেট পরিকল্পনায় চাপ সৃষ্টি করছে। তবে এসব যুক্তি দেখালেই জনগণ কৃচ্ছ্রসাধনের আহ্বানে সাড়া দেবে, এমন ভাবার কারণ নেই। দ্রব্যমূল্যের চাপে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও দিশেহারা। ঘরে ঘরে এ নিয়ে উদ্বেগ। এ অবস্থায় জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সার, বিদ্যুৎ, পানি_ এসবের মূল্য সরকার বাড়ালে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগে আরও একটি মাত্রা যুক্ত হবে। তবে সরকার যদি 'আপনি আচরি ধর্ম অপরে শেখাও' নীতি অনুসরণ করে তাহলে জনসাধারণের তরফে প্রতিক্রিয়া কিছুটা ভিন্ন হতেই পারে। সবার আগে মন্ত্রী-সচিবদের কম জ্বালানি তেল খরচ এবং যানবাহনের ব্যবহার কমাতে হবে, অফিসে ও বাসভবনে এয়ারকন্ডিশন্ড মেশিনের ব্যবহারও কমিয়ে আনতে হবে। সরকারি প্রকল্পে অপচয়-অনিয়ম হ্রাসেও চাই আন্তরিক উদ্যোগ। প্রধান বিচারপতির জন্য ১১ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে গাড়ি কেনা কোন ধরনের কৃচ্ছ্রসাধন সে প্রশ্নও উঠতে পারে। উন্নয়ন কর্মসূচির বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতে তীব্র প্রতিযোগিতার খবর নিয়মিত আসে গণমাধ্যমে এবং তার সঙ্গে শাসক দলের সংশ্লিষ্টতাই থাকে বেশি। কোথাও কোথাও প্রতিযোগিতা সহিংস রূপ নেয়। ভালো কাজের জন্য নয়, বরং এর উদ্দেশ্য থাকে নিম্নমানের কাজ করে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীস্বার্থ হাসিল করা। এ অবস্থায় কৃচ্ছ্রসাধনের যে কোনো উদ্যোগ ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়াবে বলেই শঙ্কা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ফেলা হলে আরও একটি প্রশ্ন উঠবে_ প্রায় ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা এভাবে অর্জন করা সম্ভব হবে কি?

No comments

Powered by Blogger.