সব সড়কে যান চলাচল নিশ্চিত করুন-ঈদের আগে কেন ধর্মঘট?

টার্মিনাল সংস্কারসহ কয়েক দফা দাবিতে রংপুর মোটর-শ্রমিকেরা শনিবার সকাল ছয়টা থেকে ধর্মঘট শুরু করায় উত্তরাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ ভয়াবহ বিপদে পড়েছে। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার বাসমালিক ও শ্রমিকেরা সড়ক সংস্কারের দাবিতে সোমবার থেকে ধর্মঘটে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।


এই ঘোষিত ধর্মঘটের বাইরে দেশের বিভিন্ন সড়কে চলছে অঘোষিত ধর্মঘট। কোথাও বাস চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, কোথাও বা তিন ঘণ্টার রাস্তা পেরোতে সময় লাগছে সাত-আট ঘণ্টা।
ঈদের আগে সারা দেশে বেহাল সড়কের কারণে যখন লাখ লাখ মানুষের বাড়ি যাওয়া অনিশ্চিত, তখন পরিবহনশ্রমিক বা মালিক সংগঠনের নামে এ ধরনের ধর্মঘট কেবল অনৈতিক নয়, অমানবিকও। জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গতকাল বিকেল চারটায় মোটর-শ্রমিকেরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও উত্তরাঞ্চলের মানুষকে ১০ ঘণ্টা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। মানুষকে জিম্মি করে বা কষ্ট দিয়ে দাবি আদায়ের পথ পরিহার করতে হবে।
কেবল রংপুর বা কুষ্টিয়া নয়, সারা দেশেই সড়ক-মহাসড়কগুলো বেহাল, খানাখন্দে ভরা। যে কারণে কয়েক দিন আগে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলেন পরিবহনমালিকেরা। যোগাযোগমন্ত্রীর অনুরোধে সড়ক দুটিতে সীমিত পর্যায়ে যানবাহন চলাচল শুরু করলেও এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা-মুন্সিগঞ্জসহ কয়েকটি আঞ্চলিক রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ঈদ সামনে রেখে প্রতিবছর ট্রেন ও বিআরটিসির যাত্রীসেবা বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও অতিরিক্ত বাস নামানো হয়। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমে, বাসমালিকেরাও অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ পান। কিন্তু এ বছর সড়ক-মহাসড়কগুলোর অবস্থা এতই নাজুক যে বেসরকারি পরিবহনমালিকেরা বাড়তি বাস নামাতে আগ্রহী নন। তাই সরকারি ও বেসরকারি প্রতিটি পরিবহন সংস্থার টিকিট কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়। টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে অনেকে।
এই অবস্থায় কোনো রুটে ধর্মঘট পালন মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দেবে সন্দেহ নেই। এ কারণেই সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমাদের আহ্বান, ধর্মঘটের নামে ঈদের আগে মানুষকে আর কষ্ট দেবেন না। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া অঞ্চলের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে অবিলম্বে আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা।
সড়ক মেরামতের কাজ তদারকির জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ছুটি বাতিল করাই যথেষ্ট নয়। এ মুহূর্তে ভাঙাচোরা সড়কগুলো এমনভাবে মেরামত করতে হবে, যাতে ঈদের আগে যানবাহন চলাচলের উপযোগী হয়, যাতে পরিবহনমালিকেরা বলতে না পারেন—রাস্তা খারাপ, বাস চালানো যাবে না। দেশবাসী কোনো অজুহাত শুনতে চায় না। নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যই এই মন্ত্রণালয়, মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়। কথাটি মন্ত্রী মহোদয় এবং তাঁর অধীন সবাই মনে রাখবেন আশা করি।

No comments

Powered by Blogger.