রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির ব্যর্থতার দায় কার?-দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও টিসিবি

বাজারে আগুন’—কথাটা বলতে এখন আর অগ্নিকাণ্ডে বাজার পুড়ে যাওয়া বোঝায় না। যা বোঝায়, তা বড়ই কষ্টের ব্যাপার। রাজধানীর ঢাকার মানুষ সেই কষ্টে আছে: টানা বর্ষণ ও ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে রাজধানীর বাজারগুলোতে সব ধরনের সবজির সরবরাহ কমে গেছে বলে দাম এতটাই বেড়ে গেছে যে বলা হচ্ছে, বাজারে আগুন লেগেছে।


একে তো রমজান মাস, তার ওপর টানা বর্ষণ, তারও ওপর রাস্তাঘাটের ভয়াবহ দুরবস্থা। সামনে ঈদুল ফিতর। সে পর্যন্ত বাজারের অবস্থা আরও তেতে উঠতে পারে। আবার বৃষ্টি নামবে না এমন কথাও বলা যায় না। কারণ, এটা বৃষ্টিরই মৌসুম। সারা দেশের রাস্তাঘাটের যে বেহাল দশা, তা মেরামত করাও কম সময়ের মধ্যে সম্ভব নয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস এমন, ২৪ আগস্টের পর ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হবে। তাহলে রাস্তা মেরামতের কাজে সত্যিই এক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। ফলে পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি ঈদের ছুটিতে ঘরে ফেরার জন্য উন্মুখ প্রায় ১২টি জেলার মানুষের চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হতে পারে।
শুধু যে সবজির বাজারই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে, তা মোটেও নয়। অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে রাখার পদক্ষেপগুলো কার্যকর হচ্ছে না। চিনির ব্যাপারটি তো কেলেঙ্কারির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে—আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে চিনির বাজার। ডিও প্রথা তুলে দিয়ে পরিবেশক প্রথা চালু করার পর চিনির পরিবেশকদের প্রতি সরকারের কড়া নির্দেশ: সরাসরি খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে চিনি বিক্রি করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, চিনির বাজার এখনো পাইকারি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে; তাদের হাত ঘুরেই বিক্রি হচ্ছে চিনি, চড়া দামে। ভোজ্যতেল, ডালসহ অন্যান্য দ্রব্যের দামও বেশি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একযোগে চেষ্টা করেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কাজে রাষ্ট্রীয় সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) ফলপ্রসূভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। সংস্থাটিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা করা হয়েছে, কিন্তু চিঠি চালাচালি ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। টিসিবিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল একটি দুর্বল প্রতিষ্ঠান করে রাখা হয়েছে। পণ্য আমদানির জন্য টিসিবিকে এক হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তাপত্র (লন অন ট্রাস্ট রিসিট) দেওয়া হয়েছে; কিন্তু পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর টিসিবির নির্ভরশীলতার কারণে সংস্থাটি এই বিরাট সুবিধা কাজে লাগাতে পারে না। টিসিবিকে নিজের কাজ ঠিকমতো করার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হওয়া উচিত সংস্থাটির কাজ মনিটর করা; স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। অভিযোগ রয়েছে, টিসিবি কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াতে পারছে না বেসরকারি খাতের বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও খোদ টিসিবির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশের কারণে। এই অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উচিত অভিযোগটির সত্যাসত্য খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনগণের যে দুর্ভোগ হচ্ছে, তা খোদ সরকারের জন্যও বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে। সুতরাং, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.