ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনঃ একক প্রার্থী সমর্থন দেবে না মহাজোট by জাহাঙ্গীর আলম

ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে একক প্রার্থী দেবে না ক্ষমতাসীন মহাজোট। আর বড় শরিক আওয়ামী লীগ কেমন প্রার্থী দেবে, তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, বৈঠকে সিটি করপোরেশনে মহাজোটের শরিকদের আলাদা প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলীয় কেউ না থাকলেও এরশাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
রাজনৈতিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের অবনতির কারণ সিটি নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে। জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে শরিকদের কাউকে মনোনয়ন না দেওয়ায় এমনিতেই ক্ষুব্ধ ছিল শরিকেরা। ডিসিসি নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় শরিক দলগুলো আওয়ামী লীগের ওপর নানা দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করে। এরই মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাসদের নেত্রী শিরীন আখতার, জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও আবদুর রহিম নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। একইভাবে উত্তরে জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব বাহাউদ্দিন আহমেদ এবং জাসদের ঢাকা মহানগরের সমন্বয়ক মীর আখতার প্রচার চালাচ্ছেন। তা ছাড়া বিরোধী দলের কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় ১৪ দলের ব্যানারে কর্মসূচি দেওয়া হলেও জাতীয় পার্টি এতে একাত্মতা ঘোষণা করেনি। মহাজোটের ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা এইচ এম এরশাদকে অনুরোধ করলেও তিনি সাড়া দেননি। এ রকম পরিস্থিতিতে শরিকদের সঙ্গে নতুন করে মন-কষাকষি এড়াতে ঢাকায় মেয়র পদে নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা জানান, ডিসিসি উত্তর-দক্ষিণের মেয়র পদে আওয়ামী লীগেরও একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তবে প্রার্থী সমর্থন দেওয়া না-দেওয়া নির্ভর করবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগেরও দলীয় কৌশল আছে। ইতিমধ্যে দক্ষিণে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে মাঠে নেমে গেছেন প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন, হাজি মোহাম্মদ সেলিম, আওলাদ হোসেন। একইভাবে উত্তরে সক্রিয় রয়েছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার, নোয়াখালী আওয়ামী লীগের নেতা খন্দকার আজহারুল হক ও চিত্রনায়ক ফারুক।
সূত্র জানায়, ডিসিসি নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ না নিলে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কাউকে সমর্থন দেবে না। আওয়ামী লীগ দলগতভাবে কারও পক্ষে মাঠে নামবে না। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রার্থী সমর্থনের ব্যাপারে কৌশলী হবেন। বিএনপি সরাসরি নির্বাচনে না এসে কাউকে নাগরিক কমিটির ব্যানারে সমর্থন দিলে আওয়ামী লীগও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীকে দলীয় সমর্থন দেবে। এ ক্ষেত্রে তারা বিকল্প প্রার্থী মোটামুটি ঠিক করে রেখেছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ে খবর আছে, রাজনীতিক মাহমুদুর রহমান মান্না নাগরিক কমিটির ব্যানারে ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে নির্বাচন করতে পারেন। তাঁকে বিরোধী দল নেপথ্যে সমর্থন করতে পারে বলে দলীয় নেতারা মনে করছেন। এ রকম পরিস্থিতির উদ্ভব হলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও একজন বিকল্প প্রার্থী ঠিক করে রাখা হয়েছে। ডিসিসি উত্তরে এখন যাঁরা নির্বাচনী প্রচারে মাঠে রয়েছেন, তাঁদের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। একইভাবে দক্ষিণেও আওয়ামী লীগ পরিস্থিতি বুঝে প্রার্থী সমর্থন দেবে।
সিটি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা স্থানীয় নির্বাচন। তাই দলীয় বা জোটগতভাবে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে তফসিল ঘোষণার পর কারা প্রার্থী হতে চান, তা দেখে আমরা প্রার্থী সমর্থনের বিষয়টি চূড়ান্ত করব।’

No comments

Powered by Blogger.