এরশাদ উল্লাহকে বহিষ্কার-দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে বিভক্তি আরও বাড়বে by একরামুল হক

দল থেকে এরশাদ উল্লাহ বহিষ্কারের ঘটনায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির রাজনীতিতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি আরও বাড়ার পাশাপাশি নানা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন নেতা-কর্মীদের একটা অংশ।অন্যদিকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরীসহ বেশির ভাগ নেতা এরশাদকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।


বরং এরশাদ উল্লাহ না থাকলে দলের সাংগঠনিক কাঠামো আরও মজবুত হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
জানা যায়, বোয়ালখালী উপজেলায় বিএনপির রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তাঁকে সহায়তা দিয়ে আসছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, বোয়ালখালীর বাসিন্দা আহমদ খলিল খান। এক-এগারোর পর মোরশেদ খান দেশ ছেড়ে চলে গেলে এলাকার রাজনীতির মোড় অনেকটা ঘুরে যায়।
এরশাদ উল্লাহর একাধিক অনুসারী নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে জানান, মোরশেদ খান দেশ ছেড়ে চলে গেলে তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করা হয় বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরশাদ উল্লাহকে দিয়ে। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোরশেদ খানের পরিবর্তে এরশাদ উল্লাহ মনোনয়ন পান। কিন্তু নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এ জন্য তিনি মোরশেদ খানকে দায়ী করেন।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৮ সাল থেকে মোরশেদ খানের সঙ্গে এরশাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। এরপর তাঁদের বোয়ালখালী বা চান্দগাঁও এলাকার কর্মসূচিতে একমঞ্চে আর দেখা যায়নি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মোরশেদ খান গণসংযোগ চালাতে গিয়ে বোয়ালখালী থেকে পটিয়ায় যাওয়ার সময় এরশাদের অনুসারীরা তাঁদের (মোরশেদের) গাড়ি বহরে হামলা চালায় অভিযোগ পাওয়া গেছে। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলো চলো ঢাকায় চলো’ কর্মসূচি সফল করতে আমাদের গণসংযোগ কর্মসূচি চলছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এ রকম কর্মসূচি পালন করার সময় এরশাদ উল্লাহর সমর্থকেরা ইটপাটকেল গাড়িবহরের দিকে ছুড়ে মারছিল। একই সময় মাইকে অশ্লীল ভাষায় মোরশেদ খানসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের গালাগাল করছিল। এভাবে গাড়িবহরে হামলার ঘটনা দুঃখজনক। পত্রিকায় এসংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে। এরপর ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) অনুমোদন নিয়ে কেন্দ্র এরশাদকে বহিষ্কার করে। এতে দলে কোনো প্রভাব পড়বে না। বরং অন্যরা এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবে। এতে সংগঠনে শৃঙ্খলা আসবে।’
এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে এরশাদ উল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত বোয়ালখালী বিএনপির কর্মী সাহাবউদ্দিন বলেন, ‘এক-এগারোর কঠিন সময়ে এরশাদ উল্লাহ দলের কান্ডারি হিসেবে আবির্ভূত হন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ ছিল না বলে জরুরি অবস্থার মধ্যে সাংগঠনিক কাজ করতে পেরেছিলেন। এ কারণে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) তাঁকে চট্টগ্রাম-৭ আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী করেন। তবে দলের প্রভাবশালী এক নেতার ইন্ধনে এরশাদ উল্লাহ পরাজিত হন। এবার তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এতে দলের ভেতরে দ্বন্দ্ব-সংঘাত আরও বেড়ে যাবে বলে আমাদের আশঙ্কা।’
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আহমদ খলিল খানও দুই পক্ষের বিরোধকে কেন্দ্র করে একজনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দর্শক গ্যালারিতে বসে দুজনের (মোরশেদ খান ও এরশাদ উল্লাহ) খেলা দেখছি। দুজনই মনে হয় ফাউল করছেন। একজন তো লাল কার্ড পেয়েছেন। এটা আসলে দলের জন্য ক্ষতি।’
আহমদ খলিল আরও বলেন, ‘আমি মনে করি বহিষ্কার কোনো সমাধান নয়। আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে হবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। তবে তৃণমূলের যে কর্মীরা নেতাদের ওপর হামলা চালায়, তাদের চিহ্নিত করে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে। ওরা আমার ওপর হামলা করেছে। ওরাই আবার মোরশেদ খানের গাড়ির কাচ ভাঙচুর করেছে।’
দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির পুনর্গঠিত কমিটিতে মোরশেদ খানের অনুসারীরা স্থান পান। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি এরশাদ উল্লাহর অনুসারীরা। এ কারণে এরশাদ নিজেই বোয়ালখালী বিএনপির পাল্টা কমিটি গঠন করেন।
ওই কমিটিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন এমন ব্যক্তিরা স্থান পান। তবে এঁরা বিএনপির বিতর্কিত নেতা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীরও অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সাকা চৌধুরী জেলে থাকায় তাঁর অনুসারীদের বেশির ভাগ এরশাদের সঙ্গে ভেড়েন বলে জানা যায়।
বোয়ালখালীতে বিএনপির পাল্টা কমিটি গঠনের সমালোচনা করেন দক্ষিণ জেলার সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করলে গঠনতন্ত্র মেনে চলতে হয়। এরশাদ কী গঠনতন্ত্র পড়েছেন? পাল্টা কমিটি করার গঠনতান্ত্রিক অধিকার তাঁর নেই।’

No comments

Powered by Blogger.