দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই-পুরুষের আদালতে নারীর ‘মৃত্যুদণ্ড’

মাদ্রাসাছাত্রী শিরিন আক্তার আত্মহত্যা করেছে। তার এই অকালমৃত্যু সমাজের কতগুলো মর্মান্তিক সত্যকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। যতই বলি, একুশ শতক নারীর এগিয়ে যাওয়ার, তবু আমাদের সমাজ-বাস্তবতায় আজও ‘মেয়ে’ হয়ে প্রতিবাদ করতে যাওয়ার মানে ‘অন্যায়’ করা। সেই অন্যায়ের শাস্তিও শিরিনকে পেতে হলো কথিত সালিসের নামে।


তাই শিরিনের মৃত্যু নেহাত এক আত্মহত্যা নয়। এই মৃত্যু কাঠগড়ায় দাঁড় করায় গোটা সমাজকে।
পিতৃহীন শিরিনের পরিবার ছাগল পালন করে জীবিকা নির্বাহ করত। তার একটা ছাগল প্রতিবেশী শাহ আলমের আমগাছের পাতা খেয়েফেললে সে শিরিনকে লাঠি দিয়ে পেটায়। এর প্রতিবাদে শিরিন হাতের মোবাইল ফোন আলমের দিকে ছুড়ে মারে। এ ঘটনায় গ্রামে সালিস বসে। সালিসে ন্যায়বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, উল্টো সালিসকারীরা শিরিনকে দোষী সাব্যস্ত করে; এবং তাকে শাহ আলমের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। অপমানিত শিরিন পরে আত্মহত্যা করে।
এভাবে অপমানিত হয়ে আত্মহত্যার ঘটনা অনেক ঘটলেও এর কোনো প্রতিকার নেই। ১৫ আগস্ট হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় সালিসে অপমান ও সমাজচ্যুত হওয়ার পর চার সন্তান নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে ফেরদৌসী বেগম ও তাঁর দুই সন্তান মারা যায়। সমাজের প্রভাবশালী ও তথাকথিত জনপ্রতিনিধিরা বিচারের নামে এসব অন্যায় চাপিয়ে দিচ্ছেন সমাজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও দরিদ্র মানুষের ওপর। যাঁরা মুখ বুজে এই সামাজিক অন্যায় মেনে নিতে পারেন না, তাঁরাই আত্মহননের পথ বেছে নেন।
সালিস একটি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিমূলক ব্যবস্থা হলেও এর নামে অন্যায় চাপিয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে, সমাজ-কাঠামোর ভেতরে যে পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য রয়েছে, সালিসে তার প্রচ্ছায়া নারীকে আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য করে—মাদারীপুরের ঘটনা তারই প্রমাণ। এর বিরুদ্ধে যে সামাজিক প্রতিরোধ ও আইনের প্রয়োগ দরকার, বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। আগের অন্যায়গুলোর বিচার হলে এভাবে হয়তো শিরিনকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হতো না। সালিসে পক্ষপাতমূলক বিচারের মাধ্যমে যাঁরা শিরিনের আত্মহত্যায় প্ররোচনা জুগিয়েছেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে।

No comments

Powered by Blogger.