আলোহীন জীবন অবজ্ঞায় ভরা by আজাদ রহমান

বয়স তাঁর ২০, নাম চম্পা খাতুন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়ায় হতে পারেননি সাত ভাইয়ের আদরের একমাত্র বোন। ভালোবাসার বদলে পেয়েছেন ভাইদের অবজ্ঞা, অবহেলা। সর্বশেষ স্বামীও তাঁকে ফেলে গেছেন। সঙ্গে নিয়ে গেছেন তাঁর (চম্পা) জমানো টাকায় কেনা শেষ সম্বল ভ্যানগাড়িটি। বাড়ি তাঁর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খাজুরা গ্রামে।

চম্পা জানান, ছোটবেলায় ইচ্ছা থাকলেও স্কুলে যেতে পারেননি। ভাইয়েরা ‘অন্ধ’ বলে অবহেলা করেছেন। আট বছর বয়সে বাবা মনা ফকিরকে হারান। এরপর ভাইয়েরা একে একে বিয়ে করে সবাই অন্যত্র চলে যান। রয়ে যায় শুধু মা-মেয়ের সংসার; তাও অন্যের জায়গায়, ছোট্ট একটি ঝুপড়িঘরে। দেখতে দেখতে চলে যায় কয়েকটি বছর। কাজ খুঁজছিলেন চম্পা। একসময় পেয়েও যান। ঝিনাইদহ শহরের প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থায় ঠোঙা তৈরির কাজ শুরু করেন। দিনে ৩০-৩৫ টাকা আয় হয়। এই দিয়ে মা-মেয়েতে বেঁচে ছিলেন। আর তিলে তিলে জমাচ্ছিলেন টাকা।
বলে চলেন চম্পা, পাশের বাড়ির এক ব্যক্তির মাধ্যমে বছর দুই আগে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামী শৈলকুপার ফাজিলপুর গ্রামের মহর আলী। বেকার স্বামীকে জমানো টাকায় (তিন হাজার) একটি ভ্যান কিনে দেন। সেই ভ্যান চালানোর আয়ে চলত তাঁদের সংসার। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সেই মহর আলীও তাঁকে ছেড়ে চলে যান। সঙ্গে নিয়ে যান ভ্যানটি। ‘সব হারিয়ে এখন আমি দিশেহারা,’ আক্ষেপের সুরে বললেন চম্পা।
চম্পার এক ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, বোনের খোঁজ রাখেন না, এটা ঠিক নয়। তাঁদের নিজস্ব কোনো জমিজমা নেই। তাই সবাই অন্যত্র চলে গেছেন। বোনটিকে তাঁরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন বলে দাবি করেছেন সাইফুল।
উপজেলার পাগলকানাই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য কামরুল আলম বলেন, ‘মেয়েটা খুব অসহায়। কাজকাম তেমন একটা করতে পারে না। মায়ের সঙ্গে থাকে।’ তিনি জানান, ওদের দুরবস্থা দেখে তিনি জমি দিয়েছেন থাকার জন্য। ওর স্বামীটা ভালো না। মেয়েটার আয়ে সে (মহর আলী) চলতে চাইত।
মা ছবিরন নেছা জানান, ছেলেরা সবাই মা ও বোনকে ফেলে রেখে চলে গেছেন। তিনি মেয়েকে আঁকড়ে বেঁচে আছেন।

No comments

Powered by Blogger.