সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিন-সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন

তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছে যে সড়ক দুর্ঘটনায়, তার তদন্তের জন্য গঠিত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাসের অতিরিক্ত গতি ও চালকের অসতর্কতাই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ, অসতর্কভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো মাইক্রোবাসের চালকও।


তদন্ত কমিটি তাদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ১৪ দফা সুপারিশও করেছে, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সহায়ক হতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারক মহল এই সুপারিশগুলো বিবেচনায় নিয়ে কতটুকু পদক্ষেপ নেবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সরকার যদি সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থাগুলো নিতে ব্যর্থ হয়, তবে এ ধরনের তদন্ত কমিটি গঠন একটি গতানুগতিক ও লোক দেখানো বিষয়ে পরিণত হবে।
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিরুদ্ধে দেশের জনমত এখন সোচ্চার হয়ে উঠেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর প্রাণহানি, পঙ্গুত্ববরণ ও সম্পদের যে ক্ষতি হয়, তা দেশের জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও পঙ্গুত্ববরণের দুঃসহ বোঝা বয়ে বেড়াতে হয় অগণিত পরিবারকে। দুর্ঘটনাগুলোকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করে উদ্যোগহীন হয়ে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আধুনিক গবেষণার পর্যবেক্ষণে বলা হয়, যথাযথ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও সড়ক নিরাপত্তার বিষয়গুলো মেনে চললে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই রোধ করা যায়। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়মকানুনগুলোও মেনে চলা হয় না। তদন্ত কমিটি যে সুপারিশগুলো করেছে, সেগুলোও সড়ক নিরাপত্তার সাধারণ কিছু বিষয়। এর পরও যদি আমরা নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার সাধারণ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে না পারি, তবে তা খুবই হতাশার।
কমিটির প্রতিবেদনে স্বল্পমেয়াদি কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এই কাজগুলোর বাস্তবায়ন শুরু করতে সময়ের দরকার নেই, আগামীকাল থেকেই তা কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া যায়। একজন চালক একটানা কতক্ষণ গাড়ি চালাতে পারবেন, সেটা নির্ধারণের পাশাপাশি তা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। এ দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালকেরা একটানা দীর্ঘ ও বাড়তি সময় গাড়ি চালাতে বাধ্য হন, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। চালকদের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও যথাযথ বেতনের বিষয়টির দিকে তাই বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। চালকদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এই বিষয়গুলো জড়িত। আর মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সংস্কার, লেন বাড়ানো বা চালকদের জন্য ড্রাইভিং বিষয়ে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা চালু করার বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।
তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো বিবেচনায় নেওয়ার পাশাপাশি একটি সামগ্রিক পরিকল্পনার আওতায় সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। নিরাপদ সড়কব্যবস্থা গড়ে তোলা সামগ্রিকভাবে সময়সাপেক্ষ। তাই কাজটি শুরু করতে হবে এখনই। এ ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিক উপলব্ধি ও তৎপরতার ওপরই নির্ভর করছে সবকিছু।

No comments

Powered by Blogger.