সংঘর্ষের পর দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ

ব্যাপক সংঘর্ষের পর প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি অনির্দিষ্টকালের জন্য এবং সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি দুই দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন ছাড়াও কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি ও বিপণিবিতান ভাঙচুর করেন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা।
উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে জানিয়েছে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।
বনানীর কামাল আতার্তুক এভিনিউয়ে কয়েকটি বিভাগ নিয়ে প্রাইম এশিয়ার রয়েছে তিনটি বহুতল ভবন। অন্যদিকে, সাউথইস্টের ভবন আছে পাঁচটি। এর মধ্যে প্রাইম এশিয়ার টেক্সটাইল বিভাগ ও সাউথইস্টের আইন বিভাগ খুব কাছাকাছি।
প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল বেলা দেড়টার দিকে ওই দুটি ভবনের সামনে প্রাইম এশিয়া ও সাউথইস্টের কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে বাগিবতণ্ডা হয়। এরপর শুরু হয় সংঘর্ষ। একপর্যায়ে তা ছড়িয়ে পড়ে অন্য ভবনেও। শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে একে অপরের ভবন ভাঙচুর করেন। এরপর শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ এসে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এ সময় আতঙ্কে পথচারীরা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। অনেকে ভয়ে দোকানপাটও বন্ধ করে দেন। ইটপাটকেল নিক্ষেপে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও পাশের কয়েকটি বিপণিবিতানের কাচ ভেঙে যায়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত হলেও প্রাইম এশিয়ার শিক্ষার্থীরা তাঁদের মূল ভবনের সামনে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত হয়। সংঘর্ষের কারণে প্রায় তিন ঘণ্টা বনানীর কামাল আতার্তুক এভিনিউয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
প্রাইম এশিয়ার শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গতকাল দুপুরে সাউথইস্টের কিছু শিক্ষার্থী প্রাইম এশিয়ার টেক্সটাইল বিভাগের ভবনের সামনে এসে মাদক গ্রহণ ও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছিলেন। এতে প্রাইম এশিয়ার শিক্ষার্থীরা বাধা দিলে তাঁদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর সাউথইস্টের শিক্ষার্থীরা প্রাইম এশিয়ার টেক্সটাইল ভবনে ভাঙচুর চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়। একই ধরনের অভিযোগ করেন সাউথইস্টের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বিকেল চারটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রাইম এশিয়ার সবকটি ভবন ও সাউথইস্টের কয়েকটি ভবনের কাচ ভাঙচুরের কারণে স্থানগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সড়কে পড়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য ইটের টুকরো। এ সময় প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীকে মূল ভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা যায়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাঁদের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। সাউথইস্টের আইন ভবনের সামনেও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অবস্থান করছিলেন।
প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, পুলিশ সাউথইস্টের পক্ষ নিয়ে তাঁদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। পুলিশ ইটপাটকেল মেরে তাঁদের ভবন ভাঙচুর করেছে বলেও দাবি করেন তাঁরা।
তবে ঘটনাস্থলে থাকা গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা দরকার, পুলিশ তা করছে। এ ঘটনায় পুলিশসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছে বলে ওসি জানান। ঘটনার কারণ সম্পর্কে ওসি বলেন, মাদক গ্রহণ ও ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনা থেকে সংঘর্ষ হতে পারে বলে তিনি শুনেছেন।
প্রাইম এশিয়ার উপাচার্য গিয়াস উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা-কাটাকাটি নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ঘটনার সমাধানে বৈঠক করবে।
সাউথইস্টের প্রক্টর সৈয়দ ফকরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে কথা-কাটাকাটির জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.