রাজনীতির গণক! by আনোয়ার হোসেন

ভারতের জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে একবার সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আপনার নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট ৫০টি আসনও পাবে না। আপনি কী বলেন? উত্তরে তিনি বলেন : উনি কি গণক নাকি? অলি আহমদ এখন এলডিপি নামক একটি রাজনৈতিক দলের নেতা।


চট্টগ্রামের একটি এলাকায় তার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। এক সময়ে বিএনপি করতেন। খালেদা জিয়া এবং তার দুই পুত্রের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অন্যান্য অভিযোগ এনে দল ছেড়েছিলেন। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাকে বেশ কুশলতার সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। তিনি বোধ করি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা করেছিলেন_ যেমন মন্ত্রিসভায় স্থান কিংবা বাণিজ্যিক সুবিধা অথবা...। তবে তা পূরণ হয়নি। বলা যায়, অনেকটা এইচএম এরশাদের মতো অবস্থা। এক সময়ে সামরিক বাহিনীতে ছিলেন অলি আহমদ। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। লে. কর্নেল পদে থেকেই অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। তবে সামরিক বাহিনীতে থাকাকালেই রাজনীতিতে নাক গলিয়েছেন সত্তরের দশকের শেষ দিকে। জিয়াউর রহমান তখন দেশের রাষ্ট্রপতি। তিনি বিএনপি গঠনের জন্য দুই সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল নুরুল ইসলাম শিশু এবং লে. কর্নেল অলি আহমদকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। নানা দল ভাঙিয়ে তারা বিএনপি নামের দলটির শক্তি বাড়িয়েছেন। সাবেক ও বর্তমান অনেক আমলা, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদেরও দলে টেনেছেন। কাউকে অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন। কাউকে প্রয়োজনে ভয় দেখিয়েছেন। এখন তিনি পাদপ্রদীপের আলোয় নেই। কিন্তু ওই সময়ে রাজনীতিতে এই দুই 'সামরিক-রাজনৈতিক' ব্যক্তির কথাই ছিল জিয়াউর রহমানের পর শেষ কথা। তারা রাজনৈতিক নেতাদের জন্য যে ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতেন, সেটা খুশি মনে মেনে নিতেন অনেকেই। কেউ কেউ হয়তো কাঙ্ক্ষিত সুবিধা না পেয়ে বেজার হতেন, কিন্তু রোষ-ক্ষোভ প্রকাশের প্রশ্ন ছিল না। সামরিক শাসনামলে আত্মমর্যাদাবোধ না থাকা কোনো রাজনীতিকই এমন সাহস করেননি।
অলি আহমদ সম্প্রতি রাজনীতিতে আলোচিত হয়েছেন 'বড় দলের' তরফে 'ছোট দলকে' কাছে টানার উদ্যোগের কারণে। তিনি স্ত্রীসহ দেখা করেছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই_ এমন কথাও বলেছেন সাংবাদিকদের। দেশ মহাবিপদে ও গভীর সংকটে পড়েছে, এমন অভিমত তার। এ জন্য উদ্ধারের পথও বাতলে দিয়েছেন। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, যাকে বলতে পারি ভবিষ্যদ্বাণী_ আগামী বাজেট পেশের আগেই মহাজোট সরকারের পতন ঘটবে। অর্থাৎ সরকারের আয়ু আছে এগারো মাসেরও কম। এ সরকার স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেবে, এমন আশা করা যায় না। হতে পারে যে সরকারি জোটের সংসদ সদস্যদের একটি বড় অংশ বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহাজোট সরকারের পতন ঘটাবে। এ জন্য অবশ্য দরকার পড়বে একশ'র বেশি সদস্যের দল-জোট ত্যাগ। গণআন্দোলনে সরকারের পতন ঘটতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দেশ কীভাবে চলবে? হতে পারে ১৯৯০ সালে এইচএম এরশাদের পতনের পরবর্তী সময়ের মতো কিছু_ যেমন, তিন জোটের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে প্রথমে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে সরিয়ে উপরাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ ও রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ কর্তৃক শপথ বাক্য পাঠ করানো এবং তারপর এইচএম এরশাদের পদত্যাগের পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ। এ জন্য কোনো ফর্মুলা আসতে পারে। তবে তার শর্ত হতে হবে প্রবল গণআন্দোলন। দেখা যাক, এমনটি এগারো মাসের মধ্যে ঘটে কি-না। তবে সবকিছুর ওপরে যার প্রতি নজর রাখতে হবে সেটা হচ্ছে লে. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ গণক হয়ে উঠেছেন কি-না, সে বিষয়টির ওপর।
বাংলাদেশের অনেক মানুষের কিন্তু ভাগ্য গণনায় প্রবল বিশ্বাস আছে!
 

No comments

Powered by Blogger.