পর্যটকবান্ধব পরিবেশ তৈরি করুন-অবহেলিত খাত

‘পর্যটন সংস্কৃতির যোগসূত্র স্থাপনকারী’—এই স্লোগান দিয়ে মঙ্গলবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হলো বিশ্ব পর্যটন দিবস। এই দিবসকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী প্রথামাফিক বিবৃতি দিয়েছেন। নগরে শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে। সেমিনার-সিম্পোজিয়ামেও বক্তারা দিবসটির তাৎপর্য যথারীতি তুলে ধরেছেন। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে দেশে পর্যটক বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই।


২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পর্যটনের উন্নয়নে নানামুখী প্রকল্প ও পরিকল্পনার কথা শুনিয়েছিল। অন অ্যারাইভাল ভিসা চালুসহ বিদেশি পর্যটকদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু তা যে যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সি অব বাংলাদেশের (অ্যাটাব) বিবৃতিতেই স্পষ্ট। তারা বলেছে, ২০০৯ সালের পরিপত্র কার্যকর হলে বছরে ২০ লাখ পর্যটক আকৃষ্ট এবং ১৪ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। কিন্তু এই বিপুল সম্ভাবনাময় খাতটিকে কেন সরকার অবহেলা করছে, তা বোধগম্য নয়।
যেকোনো দেশে পর্যটন আকর্ষণের প্রধান উপায় হলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নিরাপত্তামূলক পরিবেশ এবং সহজে ভিসা প্রাপ্তি। বিদেশি পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান তিন পাহাড়ি জেলা, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও সুন্দরবন। এগুলোর মধ্যে কক্সবাজার সৈকত ছাড়া অন্যান্য স্থানে যাতায়াত খুব সহজ নয়, সময়ও লাগে বেশি। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সইয়ের পর আশা করা গিয়েছিল, তিন পাহাড়ি জেলায় পর্যটকদের সংখ্যা অনেক বাড়বে। কিন্তু বিবদমান দুই পাহাড়ি সংগঠন জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফের মধ্যে সংঘাত লেগে থাকায় পর্যটকেরা সেখানে যেতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। এ পরিস্থিতির উত্তরণ প্রয়োজন।
এই মুহূর্তে দেশের সড়ক যোগাযোগের যে বেহাল অবস্থা, তাতে বিদেশি তো বটেই, দেশি পর্যটকেরাও ভ্রমণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে বিমানও ঠিকমতো চলছে না। প্রতিবেশী নেপাল ও ভুটান পর্যটন খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না? আমাদের দেশে হিমালয় না থাকলেও আছে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত, বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন সুন্দরবন। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো উদ্যোগী হলে এখানেও বিপুলসংখ্যক পর্যটক আকর্ষণ করা সম্ভব। তবে সে জন্য প্রয়োজন উন্নত অবকাঠামো এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ পর্যটকবান্ধব পরিবেশ।

No comments

Powered by Blogger.