মনের জানালা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিষয়টি পড়াচ্ছেন। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন।


স্থানস্বল্পতার কারণে সব চিঠির উত্তর দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আমরা দুঃখিত।
—বি. স.
সমস্যা: আমি চাকরিজীবী। বয়স ৩০ বছর। আমি মানসিকভাবে দুর্বল। সামান্য ব্যাপারে ভেঙে পড়ি। কোনো কাজে গেলে বা যেকোনো কিছুতে শুধু নেতিবাচক চিন্তা আসে। নিজেকে মাঝেমধ্যে ছোট ভাবি। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে দেরি হয়। আমার চুল-দাড়ি পেকে গেছে। এ জন্য মানসিকভাবে খুব কষ্ট পাই। আমি ভাবি, এটা আমার শারীরিক সমস্যা। একজন চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েছি। তিনি কোনো সমস্যার কথা বলেননি। অবশ্য প্রতিদিন শেভ করতে হয়। আর আমি অল্পতেই রেগে যাই, যেটা আমার কাছে খারাপ লাগে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

উত্তর: এটা খুবই দুঃখজনক যে মাত্র ৩০ বছর বয়সে আপনি নেতিবাচক চিন্তার শিকার হয়েছ এবং আত্মমর্যাদার অভাবে ভুগছ। আপনার বাকি উপসর্গগুলোও বিষণ্নতা নির্দেশ করছে। যেটি বোঝা দরকার তা হচ্ছে এই বিষণ্নতা কী কারণে তৈরি হয়েছে এবং কতটা মাত্রায় এটি হচ্ছে। তবে এটি আপনার খারাপ দিক—এই কথা ভেবে আপনি নিজেকে আরও বেশি কষ্ট না দিলে ভালো হয়। আপনি তো আপনার এই মানসিক পরিস্থিতির জন্য কোনোভাবেই দায়ী নন। বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকেরা বলেছেন, শৈশবে ও কৈশোরে পরিবারে, সমাজে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা, বিপর্যয়মূলক ঘটনা বা বংশগত কারণে কোনো মানুষ পরবর্তী সময়ে বিষণ্নতার শিকার হতে পারে। বিষণ্নতার সঙ্গে দুশ্চিন্তাও সৃষ্টি হতে পারে এবং দুটো পাশাপাশি ঘটে। এই মানুষগুলো হাজার চেষ্টা করেও নেতিবাচক চিন্তা ও অনুভূতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। আমি আপনাকে অনুরোধ করব আপনি আর বেশি দেরি না করে একজন মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সিলর বা ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্টের কাছে সাইকোথেরাপি গ্রহণ করুন। আপনার মধ্যে যেহেতু নিজের অবস্থা সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা রয়েছে এবং দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা থাকা সত্ত্বেও আপনি এখন চাকরি করছেন, আশা করা যায় চিকিৎসা গ্রহণ করলে আপনি খুব দ্রুত সুস্থভাবে জীবনযাপনে করতে পারবেন।

সমস্যা: একজন অপরিচিত মহিলা একাধিক নম্বর থেকে আমার ফোনে যখন-তখন খুব বিরক্ত করে। প্রথম অবস্থায় অনেক দিন আমি তার ফোন রিসিভ করতে চাইনি। ভাবলাম, হয়তো পরিচিত কেউ। যখন সে এভাবে অনবরত ফোন করে, তখন একপর্যায়ে আমিও শুধু তার মানসিক দিক চিন্তা করে অনেক দিন হয় কথা বলি। সে বিবাহিতা। তার ছেলে ও স্বামী আছে। অথচ সে আমাকে পেতে চায়। আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। তাকে শুধু বন্ধুই জানি, এর বেশি কিছু ভাবি না। আমি তার কাছে পরিচয়পত্র চাইলে সে দিচ্ছে-দেবে বলে আজ দুই-আড়াই বছর পার করল। এ অবস্থায় আমি চেষ্টা করেছি তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করতে। তার পরও সে ফোন করে। সে নাকি অসহায়। তাই আবার শঙ্কাও হয়, সে কোনো বিপদে আছে কি না। সম্ভবত লজ্জায় কিছু খুলে বলছে না। বন্ধু হিসেবে আমি অবশ্যই তার ভালো চাই। আমি অবিবাহিত। একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করি। কীভাবে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।
সজীব (ছদ্মনাম)

উত্তর: আমার মনে হয়, যথেচ্ছভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার এবং অনর্গল কথা বলার জন্য আমাদের সমাজে বন্ধুত্বের প্রকৃত অর্থটি হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ কাউকে চাক্ষুষভাবে না দেখে, তার আসল পরিচয় না জেনে, তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস না করে কি তার বন্ধু হওয়া আদৌ সম্ভব? সে তো আপনাকে তার পরিচয় দিচ্ছে না এবং আপনিও পরিচয় গোপন রেখেছেন—এ রকম দুটো মানুষ পরস্পরের কাছে আর যা-ই হোক ‘বন্ধু’ কখনো হতে পারে না। এতে করে সমাজে প্রচলিত এই সুন্দর সম্পর্কটির প্রতি বরং অসম্মানই করা হয়। মেয়েটি যদি বিবাহিত হয় তাহলে তার স্বামীই তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করার কথা, তাই না? যদি সে বিবাহিত জীবনে অসুখী থাকে তাহলে তাকে কোনো সুস্থ উপায়ে নিজের জীবনকে আরও অর্থবহ করার পথ খুঁজতে হবে। এভাবে নিজের পরিচয় লুকিয়ে, অবিশ্বাস নিয়ে, কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করে মেকি বন্ধুত্ব তৈরি করে এবং সর্বোপরি অন্য একটি মানুষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে সে খুব অন্যায় করছে। আপনাকে সে তার সময় কাটানোর উপায় হিসেবে নিয়েছে। এখন আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, এই বিশ্বাসহীনতা ও আস্থাহীনতার ভেতর দিয়ে আপনি চলতে চান কি না। এভাবে দিনের পর দিন কারও এই অনৈতিক লুকোচুরি খেলার সাথি হয়ে নিজের নৈতিক মূল্যবোধকে বিসর্জন দিলে পরে হয়তো বা অনুতপ্তই হতে হবে। আজকাল তো টেলিফোন কোম্পানিগুলোর সাহায্য নিয়ে গ্রাহকের পরিচয়ও বের করা সম্ভব। আপনি যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এটিও প্রয়োজনবোধে তাদের জানিয়ে দিন

No comments

Powered by Blogger.