কঠিন শর্ত সহজ করতে হবে-ভারতের ঋণ

প্রায় পৌনে দুই বছর হতে চলেছে, কিন্তু ভারতের ১০০ কোটি ডলারের ঋণে যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার কথা, সে ক্ষেত্রে যা অগ্রগতি হয়েছে তাকে খুব আশাব্যঞ্জক বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের এক নতুন যাত্রা হিসেবেই ভারত এই ঋণসহায়তার প্রস্তাব করেছিল।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঋণের বিভিন্ন দিক চূড়ান্ত করতে গিয়ে দেখা গেল, এর শর্ত বড়ই কঠিন, অনেক ক্ষেত্রে তাঅযৌক্তিকও।
১০০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তার আওতায় মোট ২১টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কথা। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত ভারত মাত্র ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, এই অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে পাঁচটি প্রকল্প বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে। এই পাঁচটি প্রকল্প হচ্ছে: ছয়টি নদী খননযন্ত্র কেনা, ২৬৪টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ, দুটি ব্রডগেজ পরিদর্শন কোচ ও ১২৫টি যাত্রীবাহী কোচ কেনা ও বিএসটিআই আধুনিকায়ন প্রকল্প। আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভারতীয় ঋণের কঠিন শর্ত ও বাস্তবায়ন-জটিলতার কারণে এই প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়া হবে। এই পাঁচটি প্রকল্প নৌ, শিল্প ও রেল মন্ত্রণালয়ের অধীন এবং বৈঠকে এই তিনটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় ঋণের কঠিন শর্তের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে শুরু থেকেই। ঋণের শর্ত অনুযায়ী প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ পণ্য অথবা সেবা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিতে হবে। এই শর্ত মেনে চলতে হলে অবকাঠামো নির্মাণের অনেক সামগ্রী যা বাংলাদেশে সহজলভ্য, তা-ও ভারত থেকে আনতে হবে, এমনকি ইট, বালু, সিমেন্টের মতো পণ্যও। আবার এমন পণ্যও রয়েছে, যেগুলো ভারত নিজে তৈরি করে না কিন্তু তা তৃতীয় কোনো দেশ থেকে আমদানি করতে হবে ভারতের মাধ্যমে।
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টার একটি চিঠি আমাদের বিস্মিত করেছে। তাঁর প্রস্তাব মেনে নিলে বাজারমূল্যের চেয়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি দামে খননযন্ত্র কিনতে হবে। অন্যদিকে বিএসটিআই আধুনিকায়নের জন্য যে যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, তা ভারত তৈরি করে না। তারা তৃতীয় দেশ থেকে আমদানি করে বাংলাদেশকে দেবে। এটা কী ধরনের সৌহার্দ্যের নমুনা?
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঋণের জোগানদাতা ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের কাছে শর্ত শিথিল করার জন্য বলা হলে তারা মৌখিকভাবে রাজিও হয়েছিল। তবে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া পাওয়া যায়নি। অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীকে চিঠি না লিখে ভারতের এক্সিম ব্যাংককে চিঠি লিখলেই সেটি যুক্তিসংগত হতো।
আমরা মনে করি, ভারত বাংলাদেশের প্রতি সৌহার্দ্যের বিবেচনায় যে ঋণ দিতে চেয়েছে, তা এই কঠিন শর্তের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। আর সবচেয়ে বড় কথা, এই ঋণের আওতায় যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে, তার সুফল ভারতও পাবে। ভারত তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করলে প্রকল্পগুলো যে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

No comments

Powered by Blogger.