চারদিক-একজন বিচারককে বাঁচানোর স্বপ্ন...

দমকা হাওয়ার মতোই সংবাদ। চেনা পৃথিবী অজানা আশঙ্কায় দুলে ওঠে সবার। আমাদের প্রিয় বন্ধু নওগাঁর সহকারী জজ মুজাহিদের ক্যানসার। পলকেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সদা হাস্যময় মুখটি। ভেসে ওঠে হাজারো জিজ্ঞাসা নিয়ে তার প্রথম শিশুপুত্রটির নিষ্পাপ চোখ।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৩০তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন মুজাহিদুর রহমান। ন্যায়দণ্ড শক্ত হাতে ধরে বিচারপ্রার্থীর মুখে হাসি ফোটাবেন, বিচারের বাণী কাঁদবে না নিভৃতে—এমন স্বপ্নই দেখতেন মুজাহিদ। মেধা, যোগ্যতা আর অদম্য পরিশ্রম দিয়ে নিজের স্বপ্নকেও সত্যি করেছিলেন মুজাহিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা পেরিয়ে বিচারকের আসনেই কর্মজীবন শুরু করেছিলেন এই তরুণ। কিন্তু হঠাৎ ক্যানসার মুছে দিতে চাইছে তাঁর সব স্বপ্ন।
বাবা স্কুলশিক্ষক। পরিবারের আর্থিক অবস্থা কখনোই সচ্ছল ছিল না। তাই ছাত্র পড়িয়ে, কোচিংয়ে ক্লাস নিয়ে নিজের খরচ জুটিয়ে ঠিকই স্বপ্নের পাখা উড্ডীন রাখেন মুজাহিদ। চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পেরিয়ে ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। লেখাপড়া শেষ করে বিচার প্রশাসনে যোগ দিয়ে অল্প সময়ে সবার আপন হয়ে ওঠেন। কিন্তু নীরবে তাঁর শরীরে বাসা বাঁধল রেকটাম ক্যানসার।
মুজাহিদের কর্মজীবন শুরু খাগড়াছড়িতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। খাগড়াছড়িতে চাকরি নিয়ে তাঁর কোনো দুঃখবোধ ছিল না। বরং পাহাড়কেই আপন করে নিয়েছিলেন তিনি। তারপর বদলি হলেন নওগাঁয় সহকারী জজ হিসেবে। নিজের জেলা শহর চট্টগ্রাম থেকে অনেক দূরে। তার পরও পরিবারের প্রতি কোমল হূদয়ের মুজাহিদ ছুটি পেলেই চট্টগ্রামে যেতেন। নিজের এলাকা কক্সবাজারের পেকুয়ার নিভৃত গ্রামে মুজাহিদ সমমনা অন্যদের নিয়ে একটি স্কুল শুরু করেছিলেন, যেখানে প্রাথমিক শিক্ষাবঞ্চিত ঝরে পড়া শিশুরা লেখাপড়ার সুযোগ পেত।
ছোটবেলায় সবার মতো মুজাহিদও শিখেছিলেন, ‘দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার’। আর তাই ন্যায়ের প্রতীক বিচারক হয়ে সব সময় মনে রেখেছেন রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত এই বাক্যটি। ছোটবেলার স্বপ্নকে সততা, ন্যায়, মানবিক বোধ আর যোগ্যতায় কর্মজীবনে যখন মুজাহিদ সত্যি করতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই নির্মম ক্যানসার তাঁর স্বপ্নকে, নির্মল হাসিকে কেড়ে নিতে উদ্যত হলো। কেড়ে নিতে চাইল একজন মেধাবী তরুণ বিচারিক কর্মকর্তাকে ঘিরে তাঁর পরিবার, বন্ধু, স্বজনদের বিস্তৃত উদার আকাশকেও।
কিন্তু আমরা এত দ্রুত হারিয়ে যেতে দিতে চাই না এ স্বপ্নবাজ তরুণকে। আপনার-আমার সবার সহযোগিতায় আবারও ন্যায়দণ্ড হাতে বিচারকের আসনে ফিরে আসবেন মুজাহিদ। হাসি ফোটাবেন বিচারপ্রার্থীর মুখেও। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলে বেঁচে যাবেন মুজাহিদ। উন্নত চিকিৎসায় জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুর পাঠাতে হবে অতি দ্রুত। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ৫০ লাখ টাকা। তাই মুজাহিদকে বাঁচাতে আমরা তাঁর সহকর্মী, বন্ধু-স্বজন কড়া নাড়ছি দেশের হূদয়বানদের দুয়ারে। আপনাদের সহযোগিতা আর ভালোবাসায় বেঁচে থাকুন আমাদের সবার প্রিয় মুজাহিদ। বেঁচে থাক মুজাহিদের ছোট শিশুপুত্র মুনিবের ভালোবাসার উদার জমিন, প্রিয়তমা স্ত্রীর ভালোবাসা আর পরিবার-বন্ধু-স্বজনের আগামীর স্বপ্ন। বাংলাদেশ যেন না হারায় একজন তরুণ বিচারিক কর্মকর্তাকে।
স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। মুজাহিদ সেই স্বপ্নেরই মানুষ। আমরা তাঁকে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন। তাঁর জীবন আবার আনন্দ-হাসিতে ভরে উঠুক। দুরারোগ্য ব্যাধিকে জয় করে মুজাহিদ এই পৃথিবীতে আরও অনেক দিন বেঁচে থাকবেন। বিচারকের আসনে বসে সত্য ও ন্যায়ের পতাকা সমুন্নত রাখবেন। তাঁর মেধা ও দক্ষতা মানুষের ন্যায়বিচার পেতে সহায়ক হবে।
মুজাহিদের জন্য সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: ফারজানা সুমি, হিসাব নম্বর ১১৯-১২২০০০৩০৯৫-৫, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। প্রবর্তক মোড় শাখা, চট্টগ্রাম।
লেখক: কেশব রায় চৌধুরী, শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান, মাশরুর শাকিল, আমিনুল ইসলাম, ওমর ফারুক, আজিজুল হক, আরিফ খান, মাসুদ পারভেজ, মুনতাসির আহমেদ, সৈয়দ মাশফিকুল ইসলাম, হাসিবুল হক, এম এ সালাম, আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া ও শরিফুল হাসান।

(লেখকেরা মুজাহিদের বন্ধু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র ও বিচার বিভাগের সহকর্মী)।

No comments

Powered by Blogger.