আত্মবিশ্বাস বাড়ল, সামর্থ্য বাড়াতে কার্পণ্য কেন?-দেশীয় উদ্যোগে গ্যাস মজুদ আবিষ্কার

ত্রিমাত্রিক জরিপে রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রে নতুন সাড়ে তিন টিসিএফ গ্যাসের মজুদ পাওয়ার ঘটনাটি এক আনন্দদায়ক ঘটনা। আগের আবিষ্কৃত প্রায় দুই টিসিএফ গ্যাসের সঙ্গে নতুন মজুদ মিলিয়ে এটিই এখন দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস মজুদ ক্ষেত্র।


এটি আবিষ্কার করেছেন রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্সের একদল তরুণ ভূবিজ্ঞানী। তাঁরা স্বল্পতম সময়ে স্বল্পতম খরচে যে আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন, তা রীতিমতো প্রশংসনীয়। আমরা কেবল গ্যাসই পাইনি, পেয়েছি নতুন আত্মবিশ্বাসও। গ্যাস অনুসন্ধানে অতীতের সাফল্য আরও উচ্চতর মানে পৌঁছে দিতে পেরেছি। এই আবিষ্কার দেশের চলমান জ্বালানি-সংকটকে অনেকটা লাঘব করবে বলে আশা করা যায়। অনুসন্ধানী দল ও বাপেক্সকে এ জন্য অভিনন্দন।
সব বিচারেই প্রমাণিত হয়েছে, স্থলভাগের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সামর্থ্য, দক্ষতা ও জ্ঞান বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের রয়েছে। রশীদপুর ক্ষেত্রে প্রথম দেশীয় উদ্যোগে ত্রিমাত্রিক জরিপ পরিচালনা সাফল্যের নতুন ধাপ। যেখানে বিদেশি কোম্পানির ত্রিমাত্রিক জরিপে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ১৬ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত, সেখানে বাপেক্সের ব্যয় হয়েছে মাত্র সাড়ে ১১ লাখ টাকা। এক দশক আগের চেয়ে বর্তমানে টাকার অবমূল্যায়ন হিসাবে ধরলে কার্যত এই ব্যয় বিদেশি কোম্পানির থেকে অনেক কম। দ্বিতীয়ত, বাপেক্স এই কাজ করেছে স্বল্পতম সময়ে কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই, বিদেশি কোম্পানির বেলায় যা বিরল নয়। তাই বলা যায়, গ্যাসক্ষেত্রে দেশীয় উদ্যোগ পরীক্ষিত, নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং দক্ষতায় আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে সরকারি আনুকূল্য ও প্রয়োজনীয় তহবিল পেলে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশের আর মুনাফাসন্ধানী বিদেশি কোম্পানির দ্বারস্থ হওয়ার দরকার নেই। অথচ দুঃখের বিষয়, দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার প্রতি প্রায়ই সরকারের আচরণ বিমাতাসুলভ। অতীতে গ্যাসের বড় মজুদগুলো বাপেক্সের মাধ্যমেই লাভজনকভাবে আবিষ্কৃত হলেও, স্ব-আবিষ্কৃত ক্ষেত্রগুলোর গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্ব থেকে বাপেক্সকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর খেসারত দিতে হয়েছে জ্বালানি পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে ওঠার মাধ্যমে।
বর্তমানে গ্যাসের অভাবে বিদ্যুতের ঘাটতি ৮০০ মেগাওয়াটের বেশি। ফিবছর ১০ শতাংশ হারে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। শিল্পায়নের বিকাশও ব্যাহত হচ্ছে গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবেই। প্রবৃদ্ধির বর্তমান গতি বজায় রাখতে হলেও অর্থনীতির বিবিধ ক্ষেত্রে জ্বালানি সরবরাহ করতেই হবে। আর এ জন্য চাই আরও গ্যাস। বর্তমানে দেশের অনেক গ্যাসক্ষেত্রের ইজারা বিদেশি কোম্পানির কাছে থাকায় এবং পিএসসি চুক্তির কারণে তাদের কাছ থেকে গ্যাস কিনতে হয় উচ্চমূল্যে, ফলে জ্বালানি নিরাপত্তা যেমন নাজুক অবস্থায় আছে তেমনি জ্বালানির দাম ক্রমেই বাড়ছে। তাই ব্যয়সাশ্রয়, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং স্বনির্ভরশীলতার স্বার্থে দেশীয় উদ্যোগে ও মালিকানায় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন আরও বাড়াতে হবে। তরুণ প্রকৌশলী দল ও বাপেক্স এরই পথ দেখাল।
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও কয়লার মধ্যে যেমন পরস্পর নির্ভরতা আছে, তেমনি এর সঙ্গে যুক্ত জ্বালানি-পানি ও যাবতীয় সেবা। একটি না হলে অন্যটির মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। যোগ্যতা যেহেতু আছে, সেহেতু উদ্যোগে কার্পণ্যের কোনো সুযোগ নেই।

No comments

Powered by Blogger.