সৈকতের ঝাউবন দখল-আইনের শাসনের অভাব

'বাবু বলিলেন, বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে'- রবীন্দ্রনাথের সে সময়ে উপেনদের জমি জোর খাটিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য করা হতো। এখন বাংলাদেশে তা দখল করা হয়। চারদিকে চলছে দখলের উৎসব। শুধু উপেনদের জমি নয়, মানুষ দখল করে নিচ্ছে খোদ 'সরকার বাহাদুরের' জমিও।
এই দখল-উৎসবে রাস্তাসংলগ্ন ফুটপাত থেকে শুরু করে সৈকতের ঝাউবন, তরমুজ ক্ষেত, এমনকি শহীদ মিনারের পার্শ্ববর্তী পুরনো কবরও বাদ পড়ছে না; সর্বত্রই যেন শকুনের শ্যেন দৃষ্টি পড়ছে এবং ঠোকর বসিয়ে দিচ্ছে। ফলে একদিকে হাতছাড়া হচ্ছে সরকারি জমি ও স্থায়ী সম্পত্তি, অন্যদিকে দখল হচ্ছে অপেক্ষাকৃত দুর্বলের জায়গা-জমি। এমন খবরও প্রকাশ পাচ্ছে যে সরকারের প্রশাসনও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে জমি অধিগ্রহণ না করেই অর্থাৎ একপ্রকার দখল করেই কমপ্লেক্স তৈরি করতে শুরু করেছে কৃষকের জমিতে। দৈনিক কালের কণ্ঠের এক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, পটুয়াখালীর দাড়চিড়া নদীর অববাহিকায় জেগে ওঠা চরাঞ্চল রাঙাবালীকে নতুন উপজেলা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী দ্রুত কাজ শুরু হয় উপজেলা কমপ্লেক্স নির্মাণের। আগামীকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি রাঙাবালীর নতুন উপজেলা কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক অবকাঠামো উদ্বোধন করবেন। তড়িঘড়ি করে প্রস্তাবিত জমি নিয়মমাফিক অধিগ্রহণ না করেই ব্যক্তিমালিকানার কৃষিজমিতে উপজেলা ভবন নির্মাণ প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। এ দায়িত্বজ্ঞানহীনতা অবশ্যই দখলদারির শামিল। আরেকটি সহযোগী দৈনিক পত্রিকায় গতকাল রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে, কঙ্বাজারের ইনানী সৈকতে বন বিভাগের গড়ে তোলা সবুজ বেষ্টনীর পাঁচ একর ঝাউবন দখল করে প্রভাবশালী একটি মহল গড়ে তুলেছে ইকো বিলাস নামের বাণিজ্যিক পিকনিক স্পট। সেখানে কটেজ, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে ব্যবসা চলছে। দখলকারীরা দাবি করেছে, এ জমি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন এ দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। উল্লেখ্য, সারা দেশে রেলওয়ে, বন, নৌপরিবহনসহ প্রায় সব বিভাগের এমন লাখ লাখ একর জমি তথাকথিত প্রভাবশালীরা দখল করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। প্রশাসনের নানাবিধ দুর্বলতার কারণে তা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।
এই অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালানো প্রয়োজন। আর সেটা করতে হবে সরকারকেই। সব প্রভাব-প্রতিপত্তি উপেক্ষা করে সব ধরনের অবৈধ দখলের অবসান ঘটানো এখন সময়ের দাবি। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন, নদী ও সৈকতের এসব জায়গার দিকে আগে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের দখলদারিত্ব বন্ধ করা না গেলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। কারণ এসব দখলদারি প্রবণতা আইন অমান্য করার প্রবণতারই অংশ। এ কথাও মনে রাখতে হবে, এ ধরনের অভিযানকালে কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হলে অভিযান বিফলে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.