জাল নোটের ছড়াছড়ি-উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন

বাজারে জাল নোটের বিস্তৃতি এতটাই প্রবল যে সাধারণ মানুষের মনে একধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। সরকারের দুর্বল প্রচেষ্টার কারণে এই বিস্তৃতির গতিও রোধ করা যাচ্ছে না। শুক্রবার একটি সহযোগী পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকেই প্রচুর জাল নোট ধরা পড়ছে।


গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়েই জাল নোট ধরা পড়েছে তিন হাজার ৪৪১টি, যা আগের তিন মাসের তুলনায় দ্বিগুণ। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ব্যবস্থাটি নিয়েছে, তা অনেকটা চোর না খেদিয়ে নিজে সরে পড়ার চেষ্টার মতোই। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১০০ টাকার পুরনো নোট তুলে নেওয়ার। এর কারণ হিসেবে ব্যাংক জানিয়েছে, ৫০০ টাকার সম-আকারের ১০০ টাকার পুরনো নোটের রং তুলে বি্লচ করে ব্যাপকহারে ৫০০ টাকার জাল নোট তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ব্যাংক ৩৯৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার সমপরিমাণ ১০০ টাকার নোট বাজার থেকে তুলে নিয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এ ধরনের নোট বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অন্যদিকে গত বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে নতুন নোট বাজারে ছাড়াও বন্ধ রয়েছে। ফলে বাজারে নোটের সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে অনেকে মনে করছে।
জাল টাকা দেশের অর্থনীতিতে ভয়ানক ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেয়। বিশেষ করে স্থানীয় বাজারে জাল টাকা ছড়িয়ে পড়লে তা একদিকে যেমন ব্যক্তি প্রতারিত হয়, অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারে। জাল টাকা প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে। কিন্তু সে কার্যক্রম খুব একটা ফলপ্রসূ হয়ে উঠছে না। জাল নোটের এ বিস্তার আমরা বরাবরই দেখে আসছি। বর্তমানে ব্যাংক থেকেও জাল নোট প্রদানের অভিযোগ পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে দু-একজন জাল নোট ব্যবসায়ী ধরা পড়লেও এর পেছনের বড় বড় চক্র ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যাচ্ছে। জাল নোট তৈরির মাত্রা এতটাই তীব্র যে এ ব্যবসার সঙ্গে আফ্রিকার বেশ কিছু দেশের নাগরিকরাও জড়িয়ে পড়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ইতিমধ্যে বেশ কিছু বিদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে। শুধু তা-ই নয়, একাধিক নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনেরও রয়েছে জাল নোট তৈরির চক্র। অর্থাৎ জাল নোট চক্রের সঙ্গে রয়েছে একাধিক অপরাধ। আমরা আশা করি, কঠিন হাতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এ জাল নোট চক্রকে গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করবে। এ ধরনের অপরাধ বাড়তে দিলে তা ভয়ানক সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করে থাকে। জাল নোট তৈরি করার ব্যাপারে আরো কঠিন আইন প্রণয়ন করার প্রয়োজন রয়েছে। শুধু উদ্বেগ প্রকাশ বা বিক্ষিপ্ত অভিযান চালালেই হবে না, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে আরো সক্রিয় হতে হবে বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.