সরকারের কিছু অবস্থান ও পদক্ষেপের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলের অন্য শরিকদের দ্বিমত দেখা দিয়েছে-অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আলোচনা চায় শরিকেরাও by জাহাঙ্গীর আলম

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকেরাও নির্বাচনকালীন সময়ের সরকারব্যবস্থার বিষয়ে সমাধান চায়। এ জন্য শরিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা চায়।১৪ দলের শরিক কয়েকটি দল গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আলাদা বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।


তবে আওয়ামী লীগ মনে করে, আগামী জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হবে, তা নিয়ে এখনই আলোচনার সময় হয়নি। নির্বাচনের দু-তিন মাস আগে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন।
১৪ দলের শরিক বেশির ভাগ দলের নেতারাই মনে করেন, নির্বাচনকালীন সময়ের সরকারব্যবস্থার বিষয়ে দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও এ নিয়ে আলোচনা চায়। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রকাশ্য বক্তৃতায়ও এ কথা বলেছেন।
ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদীয় প্রতিনিধিদলও বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনেক আগেভাগেই রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন-পদ্ধতি নিয়ে সমাধানের পথ খুঁজে নিতে হবে।
১৪ দলের একাধিক সূত্র জানায়, সরকারের আরও কিছু অবস্থান ও পদক্ষেপের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলের অন্য শরিকদের দ্বিমত দেখা দিয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আলোচনা হয়। জাসদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক সম্পর্কে আওয়ামী লীগের কাউকে অবহিত করা হয়নি।
জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই বৈঠকে কিছু রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, নির্বাচন নিয়ে সংশয় দূর করা দরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা কী হবে, সেটা আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছানো জরুরি।’ এ বিষয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার ওপরও রাশেদ খান মেনন গুরুত্বারোপ করেন।
শরিক দলগুলোর এই রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে, তা নিয়ে আলোচনার সময় এখন নয়। সরকারের মেয়াদের আরও দুই বছর বাকি আছে। নির্বাচনের দু-তিন মাস আগে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো দেশের অনেক সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধানের দিকেই বেশি নজর দেওয়া দরকার।’
১৪ দলের একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবারের বৈঠকের আয়োজক ছিলেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি আগের দিন সন্ধ্যায় মুঠোফোনের খুদে বার্তায় আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি শরিক দলগুলোর নেতাদের জাসদের কার্যালয়ে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বৈঠক করে ইনু গতকাল সকালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ে এক সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি চলে গেছেন।
ওই বৈঠকে হাসানুল হক ইনু ছাড়াও ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, আনিছুর রহমান মল্লিক, বিমল বিশ্বাস, গণতন্ত্রী পার্টির নুরুর রহমান, গণ-আজাদী লীগের আবদুস সামাদ, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলামসহ আরও কিছু নেতা যোগ দেন। তবে ১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া ওই বৈঠকে যোগ দেননি।
সূত্র জানায়, বৈঠকে সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, অন্তর্বর্তী সরকারব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়। ১৪ দলের নেতাদের কেউ কেউ সরকারের বিরুদ্ধে ‘একলা চলো’ নীতি অনুসরণের অভিযোগ করেন। তাঁদের অভিযোগ, রাষ্ট্র পরিচালনায় ১৪ দলের শরিকদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
অবশ্য রাশেদ খান মেনন বলেছেন, এটা ছিল অনানুষ্ঠানিক বৈঠক। এতে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ছাড়াও রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, বৈঠকে কেউ কেউ সরকারের একলা চলো নীতির কথা বললেও মূল আলোচনা ছিল রাজনৈতিক বিষয়ে।
এই বৈঠক সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নেতাদের অবহিত করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে জনাব মেনন বলেন, ‘জানানো হয়নি।’
আওয়ামী লীগকে বাদ রেখে ১৪ দলের বৈঠক করায় জোটে এর প্রভাব পড়বে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, কোনো প্রভাব পড়বে না, বরং এতে ১৪ দলের ঐক্য আরও সংহত হবে।
বর্তমান সরকারের প্রথম দু-আড়াই বছরে ১৪ দলের নিয়মিত বৈঠক না হলেও কয়েক মাস ধরে মাসিক বৈঠক হচ্ছে। ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪ দলের সর্বশেষ বৈঠকে ১১ মার্চ ঢাকায় মানববন্ধন ও ২৩ মার্চ খুলনায় বিভাগীয় মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
১৪ দলের ২০ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা না করে এখন আলাদা বৈঠকে করার কারণ জানতে চাইলে জনাব মেনন বলেন, ওই বৈঠকেও এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, ১৪ দলের কিছু শরিকের আলাদা বৈঠকের বিষয়টিকে আওয়ামী লীগ নেতিবাচকভাবে নেয়নি। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, এ রকম বৈঠক হতেই পারে। এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
তবে ১৪ দলের আরেক শরিক সাম্যবাদী দল বৃহস্পতিবারের বৈঠককে ভালোভাবে নেয়নি। দলের সাধারণ সম্পাদক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা একটা ষড়যন্ত্র। প্রধানমন্ত্রীকে একলা করার অপকৌশলের সঙ্গে সাম্যবাদী দল নেই।’ আজ শনিবার দুপুরে দলটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.