সখীপুরে বনের জমি দখল করে প্লট বিক্রি-সাইনবোর্ড সেঁটে দেওয়া হয়েছে 'বঙ্গবন্ধু পরিষদে'র by এনামুল হক

টাঙ্গাইল বন বিভাগের সখীপুর উপজেলার বহেড়াতৈল রেঞ্জের আওতাধীন ডিবি গজারিয়া বিটের কৈয়ামধু মৌজায় বনের ৮০ শতাংশ জমি দখল করে সাইনবোর্ড সেঁটে দিয়েছে 'বঙ্গুবন্ধু পরিষদ' নামে একটি সংগঠন। বিট কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ জায়গাটি মাত্র ৫০০ গজ দূরে অবস্থিত। সংগঠনটি বনের জমি দখল করে নতুন বাজার বসিয়ে পল্গট বরাদ্দ দিচ্ছে। এ ছাড়া বাজারের অন্য অংশের বনের জমিতে স্থানীয় লোকজন দখল করে নতুন বাড়ি নির্মাণ করছে বলে


অভিযোগ পাওয়া গেছে। বন বিভাগ এক্ষেত্রে কোনো বাধা দেয়নি। বরং বিট কর্মকর্তার যোগসাজশে বন বিভাগের জমি দখল ও পল্গট বরাদ্দ হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে। এভাবেই অত্যন্ত কৌশলে বনের জমি প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে।
সরেজমিন স্থানীয় লোকজন, বন বিভাগ ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কৈয়ামধু মৌজার চৌরাস্তা নতুন বাজার এলাকাটি সিএস-১ ও ২ নম্বর খতিয়ানের ৬ নম্বর দাগের। এর ৮০ শতাংশ জমি দখল করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থক কিছু যুবক 'বঙ্গুবন্ধু পরিষদ' নাম দিয়ে ওই জায়গাটিতে একটি ঘর নির্মাণ করে সাইনবোর্ড সেঁটে দেয়। বাকি জমিতেও ওই সংগঠনটি পল্গট বরাদ্দ দিচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি পল্গটে ঘর নির্মাণ করে একটি মুরগির খামার ও মনোহরি দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছে। দখল করা বাকি জমিতেও তারা পল্গট বরাদ্দ দিয়ে ঘর নির্মাণের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
এ ছাড়া ওই জমির পশ্চিম পাশে স্থানীয় সেফাতুল্লাহ মিয়ার ছেলে খলিলুর রহমান প্রায় ৪০ শতাংশ জমি দখল করে একটি টিনের বাড়ি নির্মাণ করছেন। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ডিবি গজারিয়া বিটের কর্মকর্তা আবদুল খালেক প্রতিদিন ওই নতুন বাজারে গেলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি দখল ও নির্মাণকাজে বাধা দেননি। বনের জমি বৈধভাবে দলিল না হওয়ায় নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে দখল হস্তান্তরের বেচাকেনা হচ্ছে। ওই বাজারে যারা পল্গট বরাদ্দ নিয়ে ও দখল করে ঘর নির্মাণ করে দোকান চালাচ্ছেন তারা হলেন_ আবদুল কাদের, ইসমাইল হোসেন, আমীর হোসেন ওরফে পলু প্রমুখ।
বঙ্গুবন্ধু পরিষদের সভাপতি আমীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন বলেন, ওই জমিটি বন বিভাগের হলেও আমরা দখল করিনি। পাশের বাড়ির আইনউদ্দিন ও হাসেন আলীর কাছ থেকে ৮০ শতাংশ জমি ৩ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। বনের জমিতে বাড়ি নির্মাণকারী খলিলুর রহমান বলেন, জমিটি আমার বাপ-দাদা দীর্ঘদিন ধরে দখলে আছেন। ৬ নম্বর দাগে শুধু বনের জমি নয়_ মালিকানা জমিও রয়েছে। সম্প্রতি আমাদের নামে আরএস রেকর্ড হয়েছে। সেই অধিকারেই আমি বাড়ি নির্মাণ করছি।
এ ব্যাপারে বন বিভাগের ডিবি গজারিয়া বিটের কর্মকর্তা আবদুল খালেক বলেন, ওই ৬ নম্বর দাগে বনের জমি রয়েছে। কিন্তু বনের জমি চিহ্নিত না থাকায় নির্মাণকাজে বাধা দেওয়া যাচ্ছে না।
সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ফজলুল হক সমকালকে বলেন, কৈয়ামধু মৌজায় সিএস ৬ নম্বর দাগে ৩৪ একর ৭০ শতাংশ জমি রয়েছে। এর মধ্যে বন বিভাগের ৯ দশমিক ৭০ একর, খাস জমি ১২ একর ও অবশিষ্ট জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। ওই জমিটি চিহ্নিত না থাকলেও জমিটি ব্যক্তি মালিকানাধীন নয়।
সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা বন কমিটির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সরকারি জমিতে কেউ অবৈধভাবে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করলে তা উচ্ছেদ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু পরিষদ সখীপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাই সমকালকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। জমি নিয়ে জটিলতা রয়েছে শুনে আমি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাইনি। টাঙ্গাইল বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জিএম কবির বলেন, বনের জমি দখলের বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও দখলকারীদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.