ডলারের দর বাড়ছেই-অতি প্রয়োজন ছাড়া বাজারে ডলার বিক্রি করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক by ওবায়দুল্লাহ রনি

তি প্রয়োজন ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আপাতত কোনো ডলার বিক্রি করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। দিন দিন রিজার্ভ কমতে থাকায় এ ধরনের অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল কয়েকটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার চেয়েও পায়নি। এদিকে ২ বছরেরও বেশি সময় পর সোমবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯ বিলিয়নের নিচে নেমেছে। গতকাল দিন শেষে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৮৯০ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। অন্যদিকে টাকার বিপরীতে ডলারের দরবৃদ্ধি
অব্যাহত রয়েছে। গতকাল আন্তঃব্যাংকে সর্বনিম্ন ৮২ টাকা ৬৫ পয়সা দরে ডলার বিক্রি হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ গত সপ্তাহে ব্যাংকগুলোর কাছে ৩ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকগুলোর কাছে ৬৩ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়। তবে সোমবার কয়েকটি ব্যাংক ডলারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এলেও বিক্রি করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার বিক্রির ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকবে। খুব প্রয়োজন ছাড়া ডলার দেওয়া হবে না। অন্যদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিকূল চাপের মুখে টাকার মূল্যমান ও রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বাজারে টাকা তারল্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, ডলারের বাড়তি চাহিদার ফলে প্রতিনিয়তই টাকার মান কমছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও মূল্যস্ফীতিতে যার বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। এ সময়ে রিজার্ভ কমাটা আশঙ্কাজনক। এতে আমদানিকারদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি সৃষ্টি হয়ে এলসি খোলার প্রবণতা বাড়তে পারে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকার, ব্যবসায়ী সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা দরকার। তা না হলে বিদেশিদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি কমবে। তাই রিজার্ভ বাড়াতে দ্রুততম সময়ে অপ্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় কমানো এবং সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান সমকালকে বলেন, যে কোনো দেশের মুদ্রামান কমলে তাতে ওই দেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হয়। ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমায় আমাদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে ডিসেম্বরে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে সে ধারা ঠিক থাকলে শিগগিরই এটি কেটে যাবে বলে তিনি আশা করেন।
সূত্র জানিয়েছে, সোমবার দিনের শুরুতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৯৬৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। তবে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) প্রায় ৭৫ কোটি (৭৫০ মিলিয়ন) ডলার সমপরিমাণ ডলার পরিশোধের ফলে দিন শেষে তা ৯০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে আসে। দীর্ঘ ২ বছরেরও বেশি সময় পর গতকাল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৮৯০ কোটি ডলার ৯৭ লাখ ডলার তথা ৯ বিলিয়নের নিচে নামল। এর আগে ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে টানা ২২ মাস রিজার্ভ এক হাজার কোটি ডলার তথা ১০ বিলিয়নের ওপরে ছিল। তবে গত সেপ্টেম্বরে তা ৯ বিলিয়নে নেমে আসে। বাংলাদেশ নিটওয়া্যর ম্যানুফেকচারিং অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হলে কোনো পক্ষই লাভবান হতে পারে না। দেশের জন্য এটি বড় ধরনের ক্ষতি। কেননা আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় পণ্যের দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়ে পুরো অর্থনীতির ওপর। তিনি বলেন, রফতানি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রচুর আমদানি পণ্যের প্রয়োজন হয়। ফলে ডলারের দাম বাড়লে রফতানিকারকদেরও লাভ হয় না।
প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ডলার ঊর্ধ্বমুখী :কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, বিদায়ী বছর টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর আগে আর কখনও এক বছরে টাকার মান এত কমেনি। আর চলতি বছরের ৯ দিনে প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার দর আরও ৬৫ পয়সা কমেছে। ১ জানুয়ারি আন্তঃব্যাংকে যেখানে সর্বনিম্ন ৮২ টাকা দর ছিল, ৯ জানুয়ারি সর্বনিম্ন দর দাঁড়িয়েছে ৮২ টাকা ৬৫ পয়সা। যদিও ২০১১ সালজুড়ে বাংলাদেশের আশপাশের দেশেও তাদের মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে। গত বছর ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দরপতন হয়েছে ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ, শ্রীলংকান মুদ্রার দরপতন হয়েছে ২ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং পাকিস্তান রুপির দরপতন হয়েছে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। তবে ওইসব দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বেশিরভাগ দেশে উৎপাদন হয়। যে কারণে তাদের মূল্যস্ফীতি তেমন বাড়ার আশঙ্কা থাকে না। আর বাংলাদেশ বেশিরভাগ পণ্য আমদানিনির্ভর হওয়ায় এতে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

No comments

Powered by Blogger.