চট্টগ্রামে লোকসংস্কৃতি উৎসবে মাটির টান

মহিউদ্দীন জুয়েল চট্টগ্রাম থেকে: ‘বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ, আমার বাড়ি আসে সই গো’- জনপ্রিয় এ গানটি যখন গাওয়া হচ্ছিল তখন সবার চোখে মুখে ভেসে উঠছিল একজনের ছবি। তিনি শাহ আবদুল করিম। তবে কেবল তিনি নন, তার মতো এমন দেশবরেণ্য আর গুণী শিল্পীদের রেখে যাওয়া অসংখ্য গানে জমজমাটভাবে গতকাল শেষ হলো চট্টগ্রামের ২ দিনব্যাপী লোকসংস্কৃতি উৎসব। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন দেশের প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী আর লোকগানপ্রেমী হাজার হাজার ভক্ত। সবার পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছিল বন্দর নগরীর ডিসি হিল পার্ক। ‘সমাজ সমীক্ষা সংঘ’ নামের একটি গবেষণামূলক সংগঠন ছিলো উৎসবের আয়োজক। ‘প্রাণে বাজুক প্রাণের সুর’- এমন স্লোগানকে সামনে রেখে গত শুক্রবার বিকালে শুরু হয় উৎসবের প্রথম দিনের জমজমাট আসর। চলে গতকাল রাত পর্যন্ত। উৎসব উপলক্ষে নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এতে ঢোলবাদক বাবুল জলদাস তার দল নিয়ে ঢোল বাজিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল বাঙালির কৃষ্টি, কালচারের ছাপ। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা বরেণ্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বলেন, এ ধরনের উৎসব বাঙালির শেকড়ে জন্ম নেয়া সংস্কৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। এখানকার গানে, নৃত্যে মিশে আছে আমাদের দেশের কথা, গ্রাম্য সরলতা, প্রকৃতির অপার প্রেম আর ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, কালের আবহে অনেক লোকজ ঐতিহ্য সবাই ভুলতে বসেছে। এসব ঐতিহ্য অবশ্যই আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। উৎসবে গান শুনতে আসা লোকজন যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন সেই বাঙালিয়ানায়। শিল্পীরা যখন এক এক করে গাইছিলেন হারিয়ে যেতে বসা আমাদের রবীন্দ্রনাথের বাউল, প্রয়াত শাহ আবদুল করিম, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক, রাধারমন, কুষ্টিয়ার পাগলা বাবুল, কবি বিশ্বাসের লালন ও বাউল, শচীন দেব বর্মনের গানগুলো তখন উপস্থিত শ্রোতারা খুঁজে ফিরছিলেন সংগীতের মাদকতা। একই সঙ্গে তাদের মনে জাগ্রত হচ্ছিল বাংলার প্রকৃতির প্রেম, নারী আর দেশমাতৃকার প্রতি ভালবাসা। রংপুরের বিশ্বনাথ মোহন্ত ও রাধারানী সরকার পরিবেশন করেন ভাওয়াইয়া গান। জহির আলম গেয়ে শোনান পল্লীগীতি। কিরণ চন্দ্র রায়ের ছিল একক পরিবেশনা। তবে কেবল গান নয়, গানের পাশাপাশি আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দিতে ছিল মনভোলানো, উপভোগ্য নাচ। মণিপুরী, মৃদঙ্গ, খাগড়াছড়ির গিরি আর প্রমা অবন্তীর পরিচালনায় লোকনৃত্য সবার নজর কাড়ে। উৎসব আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজ সমীক্ষা সংঘের পরিচালক মিন্টু চৌধুরী বলেন, বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো আমরা এ উৎসব করছি। আগামীতেও এ আয়োজন অব্যাহত থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.