টিআর দুর্নীতি-পুকুরচুরি বন্ধ করতে চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা

প্রক্রিয়া থেমে নেই। থেমে থাকে না। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে সময়ে সময়ে শুধু কিছু চরিত্র হয়তো বদলে যায়। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে টেস্ট রিলিফ বা কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি নিয়ে চুরির যে ঐতিহ্য, সেটা আজও বজায় আছে বলতে হবে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে তেমন চিত্রই ফুটে উঠেছে।


টিআর-কাবিখা নিয়ে এমন পুকুরচুরির ঘটনা তো আর নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক আশীর্বাদপ্রাপ্ত একটি শ্রেণী দীর্ঘদিন ধরেই এ কাজ করে আসছে। এদের সঙ্গে এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তারও যোগসাজশ থাকে। দুর্নীতির এই কলঙ্ক থেকে দেশ মুক্ত হতে পারেনি। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের এই ধারা যে এখনো চালু আছে, সেটা আর উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। সাধারণভাবে দেখা যায়, কোথাও কোনো উন্নয়নকাজের জন্য টেস্ট রিলিফের আওতায় যে সাহায্য দেওয়া হয়, সেই সাহায্য লুটেপুটে খেয়ে নেয় রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তিরা। টেস্ট রিলিফ বা কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির টাকা অন্যায়ভাবে উঠিয়ে নেওয়া বা আত্মসাতের ঘটনা প্রতিবছর সারা দেশে কত যে ঘটে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব কর্মসূচির সাহায্য লুটপাট হয়ে যায়। যাদের এসব প্রকল্পের সুবিধাভোগী হওয়ার কথা, তাদের কাছে আদৌ পেঁৗছায় না এসব সাহায্য। অনেক সময় এলাকার উন্নয়নকাজের জন্য টিআর বা কাবিখা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হলেও উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া এলাকায় লাগে না। যেমনটি ঘটেছে রৌমারীতে। সেখানে দুটি প্রকল্পে উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় এক টন চাল ও ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুটি প্রকল্পের সভাপতি করা হয় দুই সহোদরকে। বরাদ্দ দেওয়া হয় একটি মাদ্রাসার নামে। অথচ ওই মাদ্রাসার সঙ্গে কর্মসূচির সভাপতি হিসেবে মনোনীত দুই ভাইয়ের কোনো সম্পর্কই নেই। মাদ্রাসার কোনো উন্নয়নকাজ না করেই টেস্ট রিলিফের ওই চাল ও অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন টিআরের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ও চাল তুলে নিয়ে কাজ না করার জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকেও পাওয়া গেছে স্বীকারোক্তি। এই টাকা তুলে সরকারি কর্মকর্তাদের কাকে কত উৎকোচ দিতে হয়েছে, তাদের স্বীকারোক্তিতে সে কথাও উঠে এসেছে। এক কর্মকর্তা টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রকল্পটি ছিল স্থানীয় সংসদ সদস্যের।
রৌমারীর ঘটনাটি তবু সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এমন অনেক ঘটনাই থেকে যায় খবরের আড়ালে। এমন কত বিশেষ বরাদ্দ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের বিশেষ অনুগ্রহভোগী ব্যক্তিদের জন্য প্রতিদিন করা হচ্ছে, তার সঠিক হিসাব কোথাও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না, কিন্তু একটি ঘটনাই বলে দেয় যে এই অনৈতিক কাজটি চলছে। এটি অবশ্যই একটি অনাচার। সারা দেশের এজাতীয় চুরির যোগফল থেকে হয়তো এটাই প্রমাণ হবে, সব মিলিয়ে এ ধরনের পুকুরচুরি চলছে। এই পুকুরচুরি বন্ধ করতে পারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সরকারি কর্মকর্তাদের সদিচ্ছাও এ ধরনের অনৈতিক কাজ বন্ধ করতে পারে। এজাতীয় অনৈতিক কাজ বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে টিআর-কাবিখার নামে পুকুরচুরি ও লুটপাট।

No comments

Powered by Blogger.