মালয়েশিয়া বিনিয়োগে আগ্রহী-বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করুন

মালয়েশিয়া সরকারের ১৮ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছে। তারা চট্টগ্রামে এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন। মানিকগঞ্জের জামির্তা-ধল্লা এলাকায় ঢাকা ওয়াসার প্রস্তাবিত জলাধার প্রকল্প নিয়ে এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নেও তারা তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকারের এই আগ্রহ নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য একটি শুভ সংবাদ।

অর্থনৈতিক ও কারিগরি দিক থেকে সমৃদ্ধ মালয়েশিয়া আমাদের একটি পূর্ব এশীয় ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ। দুটি দেশেরই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে অভিন্ন স্বার্থ এবং অবস্থান রয়েছে। অনেক ঐতিহ্যগত মিলও রয়েছে। সর্বোপরি মালয়েশিয়ায় এখনো বাংলাদেশের কয়েক লাখ শ্রমিক কাজ করছে। কাজেই এমন একটি ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ যখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব নিয়ে এসেছে, তখন তাদের সেই আগ্রহের যথাযথ মূল্যায়ন আমাদের করতে হবে। সম্ভাব্য সব রকম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে হবে। ভবিষ্যতে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগে দেশটি যাতে আরো বেশি করে এগিয়ে আসে, সে জন্য তাদের উৎসাহী করতে হবে। অতীতে প্রাচ্যমুখী পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে অনেক কথা হলেও বাস্তবে আমরা তার প্রতিফলন তেমন একটা দেখতে পাইনি। বর্তমানে আসিয়ান, বিমসটেক ও সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে নৈকট্য কিছুটা হলেও বেড়েছে। মালয়েশিয়ার এই আগ্রহ তারই প্রমাণ। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার বিচক্ষণতার সঙ্গে এই সম্পর্ককে অনেক দূর এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে।
বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি ও নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি। সে জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। আমরা আশা করি, সরকারি ও বিরোধী দলসহ দেশের রাজনীতিবিদরা সে বিষয়টি মাথায় রেখেই তাঁদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন এবং তুচ্ছাতিতুচ্ছ ব্যাপারে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি থেকে বিরত থাকবেন। এ ছাড়া জ্বালানি ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি এবং অবকাঠামোর উন্নয়ন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের জন্য অতিজরুরি। এ ক্ষেত্রে আমাদের এখনো অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, সরকারের উচ্চপর্যায়ের লাগামহীন দুর্নীতিও বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহী করে থাকে। এ বিষয়ে আমাদের আরো বেশি যত্নবান হতে হবে এবং যেকোনো মূল্যেই হোক, এই দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.