ভয়ংকর রূপে ছাত্রলীগ

গন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ আহবায়ক সাইফুল ইসলাম আকন্দ ও যুগ্ম আহবায়ক খন্দকার আরিফুজ্জামানের সমর্থকদের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছে ২০ নেতা-কর্মী। ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিন, শ্রেণীকক্ষ ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।

সংঘর্ষের খবর শুনে ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জবির ১৭ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার এবং সাইফুল ইসলাম আকন্দ ও খন্দকার আরিফুজ্জামানকে শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত সোমবার সন্ধ্যায় মাগুরা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সদস্য নান্নুর কাছ থেকে চাঁদা তোলার রসিদ বই ছিনিয়ে নিয়ে চাঁদা দাবি করে নয়ন নামের এক ছাত্রলীগকর্মী। নয়ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আহবায়ক সাইফুল ইসলাম আকন্দের সমর্থক এবং নান্নু যুগ্ম আহবায়ক খন্দকার আরিফুজ্জামানের সমর্থক। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে নয়নসহ উভয় পক্ষের পাঁচজন আহত হন। ওই চাঁদাবাজির ঘটনার জের ধরে গতকাল সকাল থেকেই সাইফুল ইসলাম আকন্দ ও খন্দকার আরিফুজ্জামানের সমর্থকরা ক্যাম্পাসে পাল্টাপাল্টি মহড়া দিলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আরিফুজ্জামানের সমর্থকরা সাইফুল সমর্থকদের মহড়ার সময় পেছন দিক থেকে ধাওয়া দিলে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আরিফুজ্জামানের সমর্থকরা সাইফুল সমর্থকদের ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে। পরে দুপুর দেড়টার দিকে সাইফুল গ্রুপের কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংক সংলগ্ন গেট দিয়ে দা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল ও অনান্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ সময় তারা আরিফুজ্জামানের কর্মীদের ধাওয়া করলে পুনরায় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আরিফুজ্জামানের কর্মীরা কলাভবনে আশ্রয় নেয়। সেখানে গিয়ে সাইফুল ইসলামের কর্মীরা তিনটি মোটরসাইকেল, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শ্রেণীকক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন ভাঙচুর করে। সংঘর্ষে খন্দকার আরিফুজ্জামান গ্রুপের সৌরভ, আলামিন, সিবি্বর, সোহাগ, ওলিউর, জাহিদ, হিরম্ব কুমার বাবু, রিশাদ, রেজোয়ান, তরিকুল এবং সাইফুল ইসলাম গ্রুপের কাওছার, তমাল, জামাল, রুবেল, টনি, নিহার রাজীব, শিপলুসহ ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। খবর পেয়ে দুপুর ২টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ক্যাম্পাসে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ প্রসঙ্গে সিদ্দিকী নাজমুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের ব্যাপারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি ছাত্রলীগে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আপসহীন। আমরা যে শাখার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি কিংবা সংগঠনবিরোধী কোনো কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ পাচ্ছি সে শাখা কমিটি বাতিল করছি।
এ বিষয়ে লালবাগ জোনের এসি জাকির হাসান বলেন, ছাত্রদের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ মূল গেটে অবস্থান নেওয়ায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা এড়ানো গেছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সংঘর্ষের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৭ বহিষ্কার : গতকালের ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ১৭ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- সৌরভ, তমাল, আগুন, নান্নু, টনি, নয়ন, ইউনুস, রেদওয়ান, হিরন্ময় বাবু, সাবি্বর, দীন ইসলাম, জাহিদ, ফয়সাল, রফিক, আলাউদ্দিন, কাওসার ও সোহাগ।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.