বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না

৯০ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। মো. আমানউল্লাহ
বীর বিক্রম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন তিনি মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে আক্রমণ চালাল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর। তাঁরা কয়েকটি দলে বিভক্ত। একটি ছোট দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো. আমানউল্লাহ। তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকল।


মো. আমানউল্লাহ সহযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। হঠাৎ একঝাঁক গুলি এসে লাগল তাঁর শরীরে। মাটিতে ঢলে পড়লেন তিনি। নিমেষে নিভে গেল তাঁর জীবনপ্রদীপ। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। খানসামায়।
দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত খানসামা। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথবাহিনী ৫ ডিসেম্বর দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁওয়ের মাঝামাঝি বীরগঞ্জ মুক্ত করে দিনাজপুরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ৯ ডিসেম্বর তারা দিনাজপুর শহরের কাছে পৌঁছে যায়। ১০ ডিসেম্বর যৌথবাহিনী সিদ্ধান্ত নেয় দিনাজপুর শহর দখল না করে খানসামা হয়ে নীলফামারীর দিকে যাওয়ার। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যৌথবাহিনী ১৩ ডিসেম্বর খানসামায় আক্রমণ করে। সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা অবস্থান। যৌথবাহিনী সেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরোধের (মুখে পড়ে)। তখন উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মো. আমানউল্লাহ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। পাকিস্তানি সেনাদেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে যায়। যৌথবাহিনী খানসামা দখল করে। যুদ্ধশেষে সহযোদ্ধারা স্থানীয় গ্রামবাসীর সহায়তায় মো. আমানউল্লাহকে সেখানেই সমাহিত করেন। কিন্তু তাঁরা কবর চিহ্নিত করে রাখেননি।
মো. আমানউল্লাহর শহীদ হওয়ার ঘটনা তাঁর পরিবার জানতে পারে দেশ স্বাধীন হওয়ার বেশ পরে। স্বাধীনতার পর পরিবারের সদস্যরা তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলেন। কিছুদিন পর তাঁরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে একটা চিঠি পান। সেই চিঠিতে জানানো হয় মো. আমানউল্লাহ ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ দিনাজপুরে যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন।
মো. আমানউল্লাহ চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে ওই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে আশ্রয় নেন। পরে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু তিনি জেড ফোর্সে না গিয়ে ৭ নম্বর সেক্টরেই যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য মো. আমানউল্লাহকে মরণোত্তর বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩০।
শহীদ মো. আমানউল্লাহর পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালী জেলায় সোনাইমুড়ী উপজেলার (ডাক: পাঁচবাড়িয়া) হাটগাঁও গ্রামে। তাঁর বাবার নাম ইসমাইল মিয়া। মা শরবৎ বানু। স্ত্রী সালেমা খাতুন। তাঁর চার ছেলে, তিন মেয়ে। শহীদ মো. আমানউল্লাহর ছবি পাওয়া যায়নি।
সূত্র: প্রথম আলোর নোয়াখালী প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান, ফখরুল ইসলাম (নোয়াখালী), আরিফুর রহমান (শহীদ মো. আমানউল্লাহর নাতি) এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৭।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.