বিআইডবি্লউটিসির শ্বেতহস্তী-স্পেশাল ব্যয়ের বহর বটে!

জাহাজটি আকারে বেশ বড়। কিন্তু চলে অন্যান্য জাহাজ ও লঞ্চের চেয়ে ধীরে। আবার এটিকে চালাতেও জ্বালানি খরচ বাবদ অনেক বেশি অর্থ গুনতে হয়। অথচ গন্তব্যে পেঁৗছতে অন্যান্য জাহাজ ও লঞ্চের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ সময় বেশি ব্যয় হয় বলে যাত্রীরা একবার চড়লে দ্বিতীয়বার ওই জাহাজের কাছ দিয়েও ঘেঁষতে চান না। সোনারগাঁও নামের এই অতিকায় শ্বেতহস্তী পুষে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডবি্লউটিসি) এখনও রাজসিক চালেই চলছে।


নাহয় তেরো মাস পর এই জাহাজকে পুনরায় পানিতে ভাসিয়ে তারা এর কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করতে যাবেন কোন দুঃখে! গত শনিবার সমকালের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এ ধরনের কথাই বলা হয়েছে। জাহাজটি বিআইডবি্লউটিসির ছিল না। এটির মালিক ছিল রেলওয়ের ফেরি বিভাগ। তারা ওদের কাছ থেকে এটি ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় কিনে নেয়। কেনার সময় নিশ্চয়ই সংস্থাটির তৎকালীন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা এটি আদৌ অভ্যন্তরীণ রুটে চালানো যাবে কি-না এবং এর ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কতটুকু সেসব বিষয় হিসাব করে দেখেছিলেন। কিন্তু জাহাজটির পেছনে ১০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করার পরও এটি পুরোপুরি কর্মক্ষম ও লাভজনক করা গেল না কেন? জাহাজটি ৭ বছরে বরিশাল-ঢাকা রুটে মাত্র ১৬ রাউন্ড ট্রিপ দিতে পেরেছে। এখন এটি বিক্রি করে দেওয়ার টেন্ডার দিয়েও সংস্থাটি কোনো আগ্রহী প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাচ্ছে না। প্রশ্ন হলো, এই জাহাজটির ইঞ্জিন ও কাঠামোর দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা সত্ত্বেও কারা একে ডাম্প করার পরামর্শ না দিয়ে বিআইডবি্লউটিসির ঘাড়ে চাপিয়ে দিল এবং কারাই বা মেরামতের নামে পরে কোটি কোটি টাকা পকেটে পুরল? দক্ষিণাঞ্চলে জাহাজ বা লঞ্চ এখনও পরিবহনের চমৎকার মাধ্যম বলেই বিবেচিত। বিশ্বের অনেক দেশেই সড়ক ব্যবস্থা উন্নত হওয়া সত্ত্বেও নৌপরিবহন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আকর্ষণ রয়েছে। পরিবেশ দূষণ নেই, দুর্ঘটনার হারও সড়কের চেয়ে অনেক কম। সোনারগাঁও নামের জাহাজের মতো শ্বেতহস্তী না পুষে আধুনিক জাহাজ সংস্থার নৌবহরে যুক্ত করা উচিত। আর যারা একটি প্রায় অচল জাহাজকে সংস্থার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা পকেটে পুরল সে সব ব্যক্তির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার ভবিষ্যতে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতি নিবৃত্তির স্বার্থেই।

No comments

Powered by Blogger.