পথে পথে চাঁদাবাজি-কোরবানির পশু পরিবহন নিরুপদ্রব করুন

প্রতিবছর কোরবানির ঈদ এলেই সারা দেশে বেশ কিছু চক্র অত্যন্ত সক্রিয় ওঠে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির পশু সংগ্রহ করে ঢাকায় আনার পথে স্থানে স্থানে এসব চক্রকে মোকাবিলা করতে হয় ব্যবসায়ীদের। তাদের দাবি করা অর্থ বা চাঁদা দিয়েই ঢাকায় আসতে হয়। এমনকি ফেরিতে ট্রাক ওঠানোর লাইন পেতেও চাঁদা দিতে হয়। আবার ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ঢুকতেও তাঁদের চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়।


পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, এসব চাঁদাবাজিতে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার, মাস্তান, লাইনম্যান এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পুলিশও জড়িত রয়েছে। চাঁদা না দিলে গরু-মহিষ ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলেও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী দুজনই বলেছেন, এবারকার ঈদে চাঁদাবাজি কঠোর হাতে দমন করা হবে। ক্ষমতাসীন দলের কেউ জড়িত থাকলে তাকেও ছাড়া হবে না। তাদেরও কঠোর শাস্তি পেতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু রাখার খবরও আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি। ফলে আশা করা গিয়েছিল, এবার ঈদে কোরবানির পশু পরিবহনে চাঁদাবাজি অনেক কম হবে। কিন্তু তাঁদের কথার সঙ্গে বাস্তবতার অমিলটাই চোখে পড়ছে বেশি। ভ্রাম্যমাণ আদালত স্থাপন অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। আদালত হয়তো শহরের হাট-বাজারগুলোর চাঁদাবাজদের আটক করে শাস্তি দিতে পারবেন। কিন্তু তাঁদের পক্ষে হাইওয়েতে চাঁদাবাজি রোধ করা কি সম্ভব? এ জন্য হাইওয়ে পুলিশ বা স্থানীয় থানাগুলোর পুলিশকেই বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু সেই পুলিশ নিজেই যদি চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে পথের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করবে কে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হুকুমই বা তামিল করবে কে? যাদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব, তারাই যদি 'ভক্ষক' সাজে, তাহলে করার কিছুই থাকে না। ব্যবসায়ীরাও তাই হতাশাজড়িত কণ্ঠে জানালেন, চাঁদাবাজির শিকার হলে সাহায্য চাইব কার কাছে?
চাঁদাবাজির শেষ ফলাফল কিন্তু আমাদেরই ভোগ করতে হয়। পরিবহন খরচসহ একটি গরু ঢাকার বাজারে তুলতে কোনো ব্যবসায়ীর যদি সাকুল্যে খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা, তিনি হয়তো পাঁচ হাজার টাকা লাভে ৩০ হাজার টাকায় সেই গরুটি বিক্রি করে দিতেন। কিন্তু রাস্তায় যদি পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়, তাহলে তিনি সেই গরুটি ৩৫ হাজার টাকার কমে বিক্রি করতে চাইবেন না। তাই সবশেষে সেই চাঁদাবাজির টাকা ভোক্তাদেরই পরিশোধ করতে হয়; এবং তা-ই হয়ে আসছে। শুধু কোরবানির পশুর ক্ষেত্রেই নয়, তরিতরকারিসহ অন্য অনেক পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেই এ ধরনের চাঁদাবাজি অহরহ হয়ে আসছে। কিন্তু এগুলো নিয়ন্ত্রণে সত্যিকার অর্থেই বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ কখনো নেওয়া হয়নি। অভিযোগ আছে, পুলিশকে দলীয়করণ করা হয়েছে। সেখানেও অবাধে ক্যাডারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলাফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ সুশাসনের প্রত্যাশায় বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছিল। কিন্তু সুফল মানুষ কতটা ভোগ করছে, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। শুধু চাঁদাবাজি নয়, সন্ত্রাস-ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধগুলোও ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বেড়ে চলেছে জাল টাকার বিস্তার এবং নানা রকম প্রতারণা। আমরা আশা করি, মহাজোট সরকার জনগণের দুর্দশার এই চিত্র দেখে তাদের হতাশা ও মনোবেদনার কথা উপলব্ধি করবে এবং এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

No comments

Powered by Blogger.