শাবিতে শিবিরকে সহায়তা দেন অর্ধশতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা by চয়ন চৌধুরী

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) অর্ধশতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার সহায়তায় ক্যাম্পাসে তৎপরতা চালাত ছাত্রশিবির। ওইসব শিক্ষক-কর্মকর্তার কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে তারা। এমনকি শিবিরকে চাঁদাদাতাদের মধ্যে শাবির কতিপয় কর্মচারীও রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় সবাই মাসিক নির্ধারিত হারে চাঁদা দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষ কারণে বড় অঙ্কের টাকাও দেন। বিশেষ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিএনপিপন্থি কিছু শিক্ষকের কাছ থেকেও শিবির চাঁদা আদায় করে থাকে।


চাঁদা দেওয়ার পাশাপাশি ৬৫ থেকে ৭০ শিক্ষক-কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়ে শিবির নেতাকর্মীদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছেন। এদিকে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাংগঠনিক তৎপরতার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত তাদের ঘরানার কিছু সাংবাদিককেও শিবির ব্যবহার করে বলে জানা গেছে। গত ১১ জানুয়ারি ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষের পর শিবির বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে বিতাড়িত হয়। এর পর বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হলে অবস্থানকারী শিবিরের শীর্ষ নেতাদের রুম থেকে চাঁদার রসিদ ও দাতাদের নামের তালিকা উদ্ধার করে ছাত্রলীগ। শিবির নেতাদের রুম থেকে উদ্ধার করা সংশ্লিষ্ট তালিকা ও তথ্যের একটি ফাইল সমকালের কাছেও রয়েছে।
শিবির নেতাদের রুম থেকে উদ্ধার করা চাঁদার রসিদ, দাতাদের নামের তালিকাসহ অন্যান্য তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে পেঁৗছেছে। শাবি শিবির সভাপতি মোজাহিদ রুমী (শাহপরান হলের ২০৭ নম্বর কক্ষ), সেক্রেটারি জাকির সিদ্দিকী জামাল (দ্বিতীয় ছাত্র হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ), প্রশিক্ষণ সম্পাদক হাফেজ মোঃ মুহিবুল্লাহসহ দায়িত্বশীল নেতাদের রুম থেকে উদ্ধার করা কয়েক হাজার পৃষ্ঠার ওই সব তথ্য বর্তমানে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি চাঁদাদাতা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারিও চলছে।
গোয়েন্দা সংস্থার ওই কর্মকর্তা বলেন, শাবিতে শিবিরের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আমাদের কাছে অনেক তথ্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের তৎপরতায় অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তা সহায়তা দিয়ে আসছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের অনেক ব্যবসায়ী ও বাসাবাড়ির মালিক শিবির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সময়ে সাহায্য-সহযোগিতা করছে। এদের অনেকেই সংগঠনটির সঙ্গে সরাসরি জড়িত কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষী। এ অবস্থায় তাদের ব্যাপারে আরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে শাবির প্রক্টর হিমাদ্রিশেখর রায় বলেন, ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী আমার কাছে শিবিরসংশ্লিষ্ট কিছু কাগজপত্র নিয়ে এসেছিল। আমি তাদের ওইগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, শাবি ক্যাম্পাস থেকে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। এজন্য ছাত্রলীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তিনি বলেন, কোনোভাবেই একাত্তরে পরাজিত শক্তির দোসরদের শাবিতে আর ফিরতে দেওয়া হবে না।
শিবির নেতাদের রুম থেকে উদ্ধার করা চাঁদাদাতাদের নামের তালিকায় শাবির বিবিএ, নৃ-বিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, লোকপ্রশাসন, গণিত, পরিসংখ্যান, আইপিই, জেনেটিকস্, পেট্রোলিয়াম, ফুড অ্যান্ড টি টেকনোলজি, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, অর্থনীতিসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকদের নাম রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনিক বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরাও শিবিরকে নিয়মিত চাঁদা দেন। তাদের কাছ থেকে মাসিক ৫০০ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা রসিদ দিয়ে চাঁদা আদায় করে শিবির। এ ছাড়া বিশেষ উপলক্ষে ১০ হাজার থেকে শুরু করে এক-দু'হাজার টাকা প্রাপ্তির অনেক রসিদও পাওয়া গেছে শিবির নেতাদের রুম থেকে।
এদিকে নিজেদের তৎপরতার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, জাতীয় ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট, তালামীযে ইসলামিয়াসহ ছাত্র সংগঠনের সাংগঠনিক তৎপরতার ব্যাপারে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করে শাবি শিবির। বছরখানেক আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের আগে কারা কারা নতুন কমিটিতে আসছে, এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সব প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নিজ ঘরানার যেসব সাংবাদিকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তাদের নামও রয়েছে। তারা শিবিরের তথ্য ও গবেষণা সেলের দায়িত্ব পালন করেন বলে উদ্ধার করা কাগজে উল্লেখ রয়েছে।
অন্যদিকে উদ্ধার করা কাগজপত্রে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পাশাপাশি শাবি ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের কিছু নেতার নামের পাশে সমর্থক হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেশ কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী ও বাসিন্দার নামের তালিকার পাশে কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.