সংগীতা দেওয়ানের পাশে দাঁড়ান

রোগ, ব্যাধি, জরা মানুষের অবধারিত। কিন্তু সেটা যদি আসে অসময়ে এবং একজন প্রতিশ্রুতিশীল নারীর কাছে, তাহলে সবার দুঃখবোধ জাগা স্বাভাবিক।। আমরা সেই বোনের জন্য আজ ব্যথিত। তবে ঐক্যবদ্ধভাবে হাতে হাত রেখে বলছি, মানুষ মানুষের জন্য... আমরা এখনও অনুভূতিহীন হইনি। সবার প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে গান আর খেলাধুলায় পারদর্শী শিক্ষিকা সংগীতা দেওয়ানকে কিডনি রোগ থেকে মুক্ত করি।
এক সাগর আশা আর ভালোবাসা নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি থেকে বধূ সেজে রাঙামাটি শহরের চম্পকনগরে স্বামীর সংসারে সংগীতা দেওয়ান এসেছিলেন গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে। মনোযোগ দিয়েছিলেন সংসার সাজাতে। স্বপ্নের জাল বুনেছেন সীমাহীন। নববধূর স্বপ্ন কোনো বাধা মানে না, মানার কথাও নয়। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। বেড়ে যায় রক্তচাপ। স্থানীয় চিকিৎসকরা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ দেন। বেশ কিছুদিন ওষুধ সেবনের পরও উচ্চ রক্তচাপ না কমায় নভেম্বরে পরীক্ষা করা হয়। তখনই ধরা পড়ে কিডনি রোগ। চিকিৎসকরা জানান, সংগীতা দেওয়ানের কিডনির কার্যকারিতা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ অবস্থায় ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালের ভারতীয় চিকিৎসক কৃষ্ণমোহন শাহুর কাছে নিয়ে যাওয়া হয় সংগীতা দেওয়ানকে। অনেক পরীক্ষার পর কৃষ্ণমোহন শাহু জানান, সংগীতা দেওয়ানের কিডনির কার্যকারিতা পঁাঁচ ভাগের নিচে নেমে এসেছে। এখন তার প্রয়োজন কিডনি প্রতিস্থাপন। এর আগে চালিয়ে যেতে হবে সপ্তাহে তিনবার করে ডায়ালাইসিস। কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রয়োজন কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা। অনেক বছর আগে অবসরে যাওয়া তৃতীয় শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী বাবা এবং সদ্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার চাকরিতে যোগ দেওয়া স্বামী রবীন চাকমার পক্ষে এমন ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালানো সম্ভব নয়।
একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক সংগীতা দেওয়ান ছোটবেলা থেকে গান ও খেলাধুলায় প্রতিশ্রুতিশীল। কিন্তু তখন থেকে ভাগ্য যেন তাকে বারবার অপঘাত করছে। কিশোরী বয়সে দেখেছিলেন মায়ের মৃত্যু। তারপরও মা-হারা কিশোরী সংগীতা দেওয়ান গানে মাতিয়ে তুলতেন হাজার হাজার মানুষকে। খেলাধুলায় অনুপ্রেরণা জোগাতেন পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়া সহপাঠীদের। আর বিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষায় ছিলেন সবার সামনে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরই পেয়েছিলেন শিক্ষকতার চাকরি। তখন আপন আলো নিয়ে বিদ্যালয়ের ছোট শিশুদের গড়ে তুলছিলেন আত্মবিশ্বাসী করে। মায়া-মমতায় ভরিয়ে তুলেছেন শিশুদের মন। এমন একজন শিক্ষিকাকে পেয়ে বিকশিত হওয়া শুরু করেছিল শিশুরাও। তখনই ভাগ্য সংগীতাকে দাঁড় করাল জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি।
সংগীতা দেওয়ানকে এখন চট্টগ্রামের সেন্টার ফর স্পেশালাইজড কেয়ার অ্যান্ড রিচার্স (সিএসসিআর) হাসপাতালে রোগমুক্তির আশায় সপ্তাহে তিনবার করে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। তার চিকিৎসায় পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যও এখন প্রায় নিঃশেষ। এমন অবস্থায় স্বামী আর বাবার সংসারের সব সদস্য দিশেহারা। সে কারণে মানবিক আবেদন নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি সংগীতা দেওয়ানের মতো একজন প্রতিশ্রুতিশীল নারীকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে। সংগীতার যন্ত্রণাকাতর শরীর ও মনের আবেদন আমাদের তরুণ সমাজের উদ্যমী শক্তিকে জাগ্রত করেছে। আমরা সবাই সংগীতার বোন-ভাই। তারুণ্যের উদ্দাম আর ঐক্যবদ্ধ শক্তি যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত। আমরা সংগীতার জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আমাদের মানবতাবাদী মন, উদ্দাম ও কর্মকে অনুপ্রেরণা দিন। সংগীতা দেওয়ানকে সুস্থ করে তুলে আওয়াজ তুলি, মানুষ মানুষের জন্য। মানবতার জয় অবশ্যম্ভাবী।
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা : রবীন চাকমা, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ৪১১৮, সোনালী ব্যাংক, বনরূপা শাখা, রাঙামাটি। On line account : Robin Chakma, A/C Number- 0482050000556, ONE Bank limited, Rangamati Branch .
লেখকবৃন্দ : পেশাজীবী ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

No comments

Powered by Blogger.