না'গঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন-অভিনন্দন নবনির্বাচিত মেয়র, কাউন্সিলর

পাল্টাপাল্টি কিছু চিরাচরিত অভিযোগ ছাড়া অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠভাবে, মোটামুটি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হলো। অন্তত কোথাও কোনো সহিংসতা দেখা যায়নি। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী চাওয়ায় এবং সরকার সেনাবাহিনী না দেওয়ায় একটি সংশয় কারো কারো মধ্যে লক্ষ করা গেলেও শেষ পর্যন্ত পর্যাপ্ত র‌্যাব, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সহায়তায় শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন হয়েছে।


এ নির্বাচনের বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ দিক রয়েছে। এবারই প্রথম বন্দরশহর নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশন মর্যাদায় মেয়র পদে নির্বাচন হলো। দেশে এবারই দ্বিতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) আংশিকভাবে ব্যবহার করা হলো। এর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল।
শেষ মুহূর্তে, অর্থাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগের গভীর রাতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার দলের নির্দেশে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। কমিশন কর্তৃপক্ষ যদিও নির্বাচনের দিন বলেছে, এভাবে শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই, এটা আইনসংগত নয়। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের দিনও প্রার্থী রয়েছেন। কিন্তু কার্যত তৈমূর আলম খন্দকার আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। উল্লেখ্য, বিএনপি এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছিল এবং ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের বিরোধিতা করেছিল। বিএনপি নেতারা এবং প্রার্থী তৈমূর আলম আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়ায় বিএনপি প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। অবশ্য আমাদের মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সর্বদা আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।
নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি আংশিক ব্যবহারের ব্যাপারে স্থানীয় জনগণ বিশেষ আপত্তি তোলেনি। তবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট প্রদানের পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় না থাকায় কিছু ক্ষেত্রে ভোট প্রদানে অসুবিধা হয়েছে এবং ভোট গ্রহণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী মোতায়েনের অনুরোধ জানালেও সরকার শেষ মুহূর্তে আর সেনাবাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেয়নি। তারা পর্যাপ্ত র‌্যাব, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেছে এবং সেটাই হয়তো প্রমাণ করতে চেয়েছে। আমরা জানি, সেনাবাহিনী মোতায়েন করলেই যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিগত দিনে সামরিক-বেসামরিক সরকারগুলোর সময়ে আমরা সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতেই নির্বাচনকে অস্বচ্ছ করে তুলতে দেখেছি। যদি একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন থাকে, তাহলে নির্বিঘ্নে স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। তবে নির্বাচন কমিশনের সেনাবাহিনী নামানোর অনুরোধের বেলায় সরকারের দোদুল্যমান ভূমিকা গ্রহণ সঠিক ছিল না বলে অনেকে মনে করছেন। সরকারের সেনাবাহিনী মোতায়েনের অপারগতার কথা নির্বাচন কমিশনকে আগেই জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। সরকার বারবার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করেছে, অথচ নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী চাওয়ার পরও না দেওয়াটা সেই অঙ্গীকারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে বিভিন্ন মহল মনে করছে।
সর্বোপরি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নবনির্বাচিত মেয়র, নির্বাচিত সব কাউন্সিলরকে আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, তাঁরা জনগণের ভোটের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখবেন। জনগণ তাঁদের মূল্যবান ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। নারায়ণগঞ্জ একটি ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র। অথচ এ শহরের আইনশৃঙ্খলা বেশির ভাগ সময় ব্যবসাবান্ধব ছিল না। নবনির্বাচিত স্থানীয় প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন উন্নয়নের পথ বেগবান হবে। বন্দর শহরে শান্তিশৃঙ্খলা ও সামাজিক যোগাযোগে একটি নতুন মাত্রা রচিত হবে। নির্বাচনে দলীয় সমর্থন থাকলেও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় এটি একটি অরাজনৈতিক নির্বাচন। সুতরাং উন্নয়নের স্বার্থে দলীয় মনোভাব বা দলীয় বিবেচনা প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই। এ কথা মনে রেখেই নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদের সামনে এগোতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.