যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে হবে নতুন মেয়রকে-নরসিংদীর পৌর নির্বাচন

রসিংদী পৌরসভার নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে এবং ইভিএম-পদ্ধতির কল্যাণে অভাবনীয় দ্রুততার সঙ্গে ফলও প্রকাশিত হয়েছে। জয়ী হয়েছেন আততায়ীর হাতে নিহত মেয়র লোকমান হোসেনের ভাই কামরুজ্জামান কামরুল। এ বিজয় নিয়ে অন্য প্রার্থীরা কোনো অভিযোগ না করায় নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে তাই প্রশ্নের অবকাশ রইল না। ধন্যবাদ নির্বাচন কমিশন এবং ধন্যবাদ নরসিংদীবাসী।


সরকারের মধ্য মেয়াদে অনুষ্ঠিত যেকোনো উপ বা আঞ্চলিক নির্বাচনে জনমতের একধরনের যাচাই হয়ে যায়। কিন্তু নরসিংদীতে যে প্রেক্ষাপটে পৌর নির্বাচন হলো, তাতে রাজনীতির থেকে বেশি কাজ করেছিল আঞ্চলিক আবেগ। গত ১ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র লোকমান হোসেন আততায়ীর হাতে নিহত হলে পৌর মেয়রের পদ শূন্য হওয়ায় এই উপনির্বাচন। মেয়র হিসেবে যিনি নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি কতটা নিজের যোগ্যতায় আর কতটা প্রয়াত মেয়রের জনপ্রিয়তা পুঁজি করে নির্বাচিত হয়েছেন, তা বলা কঠিন। এ ক্ষেত্রে দলের বা ব্যক্তির থেকে লোকমান হোসেনের পারিবারিক ভাবমূর্তিই তাঁর সহায়ক হয়েছে। একদিকে ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনে জনগণের আগ্রহ যেমন দেখা গেল, অন্যদিকে জনকল্যাণের কর্মসূচির চেয়ে পরিবারতন্ত্রই জনপ্রিয়তার নির্ধারক উপাদান হিসেবে বিবেচিত হলো। এ ঘটনা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের শক্তি ও দুর্বলতা—উভয়েরই প্রমাণ।
কামরুজ্জামান কামরুল এখন নরসিংদী পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র। সফল হতে হলে ভাইয়ের ভাবমূর্তির ছায়া থেকে বেরিয়ে তাঁকে নিজের দক্ষতা ও জনমুখিনতা প্রমাণ করতে হবে। তাঁকে দেখাতে হবে যে তিনি পরিবার বা দলের থেকে অনেক বেশি নাগরিকদের সেবক। তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে যে বিভিন্ন মামলা ছিল, সেগুলোর নিষ্পত্তিও যেন আদালতের মাধ্যমেই হয়।
নারায়ণগঞ্জ এবং কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের পর নরসিংদীর মেয়র নির্বাচনেও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়াকে গতিশীল ও আনন্দদায়ক করতে সাহায্য করেছে। নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও ফল গণনার দ্রুততার বিচারে এ পদ্ধতির ব্যবহার বাস্তবত সুফলদায়কও হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত, এ তিনটি অভিজ্ঞতার ভালো-মন্দ পর্যালোচনা করে ভোট গ্রহণের পদ্ধতি আরও নিখুঁত করে তোলা।

No comments

Powered by Blogger.