সরকার উৎখাতের অপচেষ্টা-গণতান্ত্রিক ধারার বিকল্প নেই

সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করার অপচেষ্টা সফল হতে দেয়নি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ জন্য দেশবাসী তাদের আন্তরিক সাধুবাদ জানাবে। অতীতে বারবার গোয়েন্দা ব্যর্থতার সমালোচনা হয়েছে। বিশেষভাবে তা আলোচনায় আসে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে 'বিডিআর বিদ্রোহের' ঘটনায়।
সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্য পিলখানায় সুপরিকল্পিত ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। কিন্তু তৎকালীন বিডিআর গোয়েন্দা ইউনিট কিংবা সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখা এ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আগাম ধারণা দিতে পারেনি। কিন্তু 'কিছু প্রবাসী বাংলাদেশির ইন্ধনে সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কিছু কর্মকর্তা ধর্মান্ধতাকে পুঁজি করে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার' যে অপচেষ্টা চালান, তা আগেভাগেই জানা সম্ভব হয়। এই ঘৃণ্য পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোরতম দণ্ড হোক_ এটাই কাম্য। বৃহস্পতিবার সেনা সদরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সেনাবাহিনীর মধ্যম সারির ১৪ থেকে ১৬ জন কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে তিনজন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলেছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যথার্থই বলা হয়েছে, 'অতীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাঁধে ভর করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিভিন্ন অপশক্তি রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করেছে কিংবা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সে বদনামের দায় বহন করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাগতভাবে দক্ষ এবং সুশৃঙ্খল সেনাসদস্যদের বক্তব্য এই যে, 'আমরা আর এ ধরনের দায়ভার আমাদের সংগঠনের কাঁধে নিতে চাই না।' এ অবস্থানকে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও আদর্শে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ স্বাগত জানাবে। দেশবাসী কোনোভাবেই সামরিক স্বৈরশাসন বা অগণতান্ত্রিক শাসন চায় না। এতে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সামরিক শাসন অবৈধ এবং এর সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদের কঠোর দণ্ড নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার অভ্যুত্থান চেষ্টাকে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করে নিন্দা জানিয়ে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে দল-মতের ঊধর্ে্ব উঠে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও 'অন্য কোনো পথে নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাসের' কথা বলেছে। আমরা আশা করব, সব রাজনৈতিক দল ও সামাজিক শক্তি এ প্রশ্নে অভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করবে। সেনা সদরের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়_ 'নিকট ও দূর অতীতের মতো এবারও ধর্মান্ধের অনুভূতি, অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর প্রক্রিয়া ব্যবহার করার অভিযোগ আনা হয়েছে। অপপ্রচার চালানোর জন্য স্বার্থান্বেষী সংবাদপত্র, নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের প্লাটফর্ম ব্যবহার করা হয়েছে।' এটা অসম্ভব নয় যে, একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এদেশীয় সহযোগীদের বিচারের পদক্ষেপ নস্যাৎ করার জন্য মহলবিশেষের চেষ্টার সঙ্গে এ ঘটনার সম্পর্ক থাকতে পারে। আশা করব, সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে। সেনাবাহিনী ঘটনা সম্পর্কে দেশবাসীকে যথাযথভাবে অবহিত করেছে এবং এ ধরনের পদক্ষেপ দেশে এই প্রথম। অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে এর বিকল্প নেই। সহজে দৃশ্যমান বা জানা যায়, এমন ঘটনা চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা হলে জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং গুজব রটানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা চূড়ান্তভাবে দেশের স্বার্থই ক্ষুণ্ন করে।

No comments

Powered by Blogger.