দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন রোধ এবং দিন বদলের শর্ত by এ কে এম শাহনাওয়াজ

খন চলমান সময় স্বস্তি দিতে পারে না; সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি_সব ক্ষেত্রে স্থবিরতা, যুক্তিহীনতা, অন্যায় ও অমানবিকতা মানুষকে হতাশ করে দেয়; সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আসে বন্ধ্যত্ব; তখন বেঁচে থাকার_এগিয়ে চলার আশায় আশ্বাসে মানুষ শুভ্র, নিষ্কলঙ্ক নতুন সকালের প্রত্যাশা করে। বদলে যাওয়া নতুন দিনের জন্য তাই অসহায় মানুষের ব্যাকুল প্রতীক্ষা। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতি কখনো স্থিতিশীলতা নিয়ে যৌক্তিক জায়গায় দাঁড়াতে পারল না।


আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জাতিরাষ্ট্রের সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রভাব অনেক বেশি গভীর। রাজনৈতিক চালচিত্রের সঙ্গে জীবনের যাবতীয় বিকাশ সম্পর্কিত। দীর্ঘ ৪০ বছরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে অনেকবার। নতুন আলোর নিশানা মনে করে এ দেশের মানুষ প্রত্যাশার স্বপ্ন রচনা করেছে। কিন্তু বুক ভরে মুক্তশ্বাস নেওয়ার আগেই মরীচিকায় পর্যবসিত হয়েছে আলোর ঝলকানি। উনিশ শতকের ইংরেজ ঐতিহাসিক আর্নল্ড টয়েনবি তাঁর বিখ্যাত সূত্র 'ঞযবড়ৎু ড়ভ ঈযধষষবহমব ধহফ জবংঢ়ড়হংব' প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন বিরুদ্ধ প্রকৃতি-পরিবেশ সব প্রাণীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একে মোকাবিলা করতে পারলেই টিকে থাকা, নয়তো হারিয়ে যাওয়া। লাখ লাখ বছর ধরে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তেলাপোকা টিকে থাকলেও বরফযুগের অতিকায় প্রাণী ম্যামথ রূপান্তরিত উষ্ণ প্রকৃতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। ফলে নির্বংশ হয়েছে। কিন্তু আমরা আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক জীবন-সংগ্রামের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছি। তাই আমরা চাতক পাখির মতো সকরুণ দৃষ্টিতে চ্যালেঞ্জ মুক্ত নতুন দিনের প্রত্যাশা করি। বিগত বিএনপি-জামায়াত পরিচালিত জোট সরকারের সময় অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাসের বাড়বাড়ন্ত একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল এ দেশের মানুষকে। রাজনৈতিক সংঘাত ভয়ংকর রূপ নিয়েছিল। সব চরমই ধ্বংস বা রূপান্তরের পথ তৈরি করে। আমাদের সংঘাতের রাজনীতি পথ করে দিল রূপান্তরের। বিবদমান রাজনীতিকরাই ডেকে আনলেন বিশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। অতঃপর দুই বছরের চড়াই-উতরাইয়ে বড় সাফল্য একটি অবাধ নির্বাচনের পথ তৈরি হওয়া। দীর্ঘ সংগ্রামী ঐতিহ্য ধারণ করা বাঙালির বড় সুবিধা হাজার সংকটের পরও বারবার ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করে। নির্বাচন সামনে রেখে আবার স্বপ্ন বোনে। এবার সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগ। জোট সরকারের শাসনকালের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড মুক্তমনের ভোটারদের বিক্ষুব্ধ করেছিল। বিপুলসংখ্যক ভুয়া ভোটার তালিকা ও সাজানো নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন কর্মকর্তাদের বিন্যাস অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় কার্যত বিএনপি ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল।
সবাই ভেবেছিল আন্তরিকতা নিয়েই আওয়ামী লীগ দিন বদলাতে চায়। অর্থাৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন জরাগ্রস্ত দিনের শাপমুক্তি ঘটিয়ে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে টেনে নেওয়ার মতো নতুন দিনের যাত্রা শুরু করবে মহাজোট সরকার। তাই মুক্তচিন্তার ভোটার অনেক আশায় ও বিশ্বাসে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে মহাজোটকে সরকার গঠনের জন্য সব পথ মসৃণ করে দেয়। তবে নামে মহাজোট হলেও সব সিদ্ধান্ত প্রয়োগের অধিকর্তা হয়ে যায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। তাই এই সরকারের কীর্তি-অপকীর্তি বর্তাবে আওয়ামী লীগের ওপরই। সুন্দর সকাল দেখার স্বপ্নে বিভোর এ দেশের মানুষ সরল হিসাব কষেছিল। ভেবেছিল ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগ অনুকূল পরিবেশ পেলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী হবে। অতীতের ভুলভ্রান্তিগুলো এ বেলা শুধরে নেবে। অন্যায়, দুর্নীতি, সন্ত্রাস বিএনপিকে কিভাবে জনবিচ্ছিন্ন করেছিল, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কাছে থেকে দেখেছে। উপরি পাওনা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধস্নাত এই দলটি পেয়েছে বিপুল জনসমর্থন। এসব কারণে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই ভেবেছিল এ দেশের নষ্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে জাতি এবার আওয়ামী লীগের হাত ধরে বেরিয়ে আসবে। ইতিবাচক রাজনীতির ধারায় ফিরবে দেশ। নেতৃত্বের মনোবল এবার আকাশছোঁয়া হবে। দলীয়করণের সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে নিঃশঙ্ক চিত্তে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির দেশপ্রেমিক মানুষদের কাছে টেনে বন্ধু বাড়াবে। তারপর দিন বদলে দেওয়ার কঠিন অথচ মহৎ সংগ্রামে সবাই একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এর সুস্থ প্রতিফলন ঘটবে মন্ত্রিসভা গঠনে।
কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, সরকারের তিন বছর পার হয়ে যাচ্ছে, তবু আজ এমন একটি শিরোনামে গোলটেবিল আলোচনায় সবাইকে অংশ নিতে হচ্ছে। আজও আমরা বুঝতে চাইছি দিন বদলের প্রধান শর্ত কী! অসস্তির সঙ্গে বলতে হচ্ছে দিন বদলাতে হলে বেপরোয়া দুর্নীতি আর দুর্বৃত্তায়ন রোধ করতে হবে। অর্থাৎ মহাজোট সরকারের তিন বছরেও দিন বদলের প্রধান শর্তটিই অপূর্ণ রয়ে গেছে। রাষ্ট্রযন্ত্র আইনের যথাযথ প্রয়োগ করাতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ অবস্থা নিশ্চয়ই জনমনে হতাশা তৈরি করে। নিরপেক্ষভাবে আইনের প্রয়োগ করতে না পারলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সরকারযন্ত্র আইনের প্রায়োগিক ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করতে না পারলে জনমনে হতাশা তৈরি হতে বাধ্য। এ অবস্থা দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নকে উৎসাহিত করবে। এ দেশের রাজনীতিতে সুস্থ গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি হতে না পারায় আইনব্যবস্থা কখনো স্বাধীন হতে পারেনি।
এই উজ্জ্বল ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী আমাদের যে রাজনৈতিক দল বা জোটই ক্ষমতায় এসেছে, সঙ্গে সঙ্গে মনোযোগী হয়েছে আইনব্যবস্থার ওপর প্রভাব বলয় তৈরি করতে। এ কারণে এখন অভিধানে 'রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা' নামে নতুন বাক্য যোগ হচ্ছে। রাজনৈতিক মানের নিম্নগামিতার এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর হতে পারে না। অর্থাৎ অঘটনঘটনপটীয়সী রাজনৈতিক নেতৃত্বই কবুল করছেন তাঁরা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে থাকেন। যে দল রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তাঁরা তাঁদের নেতা-কর্মীর নামে করা মামলা বাতিল করতে থাকেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, এ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার কথা। মামলা মিথ্যা কি মিথ্যা নয়, তার ফয়সালা তো আদালতে হওয়ার কথা। এর বদলে ক্ষমতাসীন রাজনীতিকরাই সব মীমাংসা করে দিচ্ছেন। চলমান এই বাস্তবতা দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে বেপরোয়া করে তোলে। ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপির দুর্নীতিকে উন্মোচন করেছিল। আওয়ামী লীগ নেতাদের দুর্নীতির কিছু খতিয়ানও প্রকাশ্যে আসে। তবে বিএনপির তুলনায় তা ছিল নস্যি। হেভিওয়েট দুর্নীতিবাজরা সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে আইনের হাতে ধরাশায়ী হতে থাকে। এই ভূমিকম্পের পর এ দেশের স্বাপি্নক মানুষ আশা করেছিল এ থেকে অন্যরা শিক্ষা নেবেন। কিন্তু অনেকেই সে শিক্ষা নিয়েছে বলে মনে হয় না। এ কারণে আইনের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়ে গেছে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বানিয়ে দুর্নীতি করছে। বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের মধ্যেও দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। পত্রিকায় প্রকাশ পাচ্ছে কোনো কোনো সংসদ সদস্য নিজ এলাকায় রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা করছেন। মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির খতিয়ান বড় হতে হতে দুর্নীতির অভিযোগে প্রস্তাবিত পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া পর্যন্ত এসে থেমেছে। আমাদের দুর্ভাগ্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের মহাজোট সরকারের আমলের দুর্নীতির কলঙ্ক বিশ্বব্যাংক পর্যন্ত পেঁৗছে আন্তর্জাতিক মাত্রা পেয়েছে; যা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। অথচ শক্ত হাতে দুর্নীতিবাজদের টুঁটি চেপে ধরার কথা যখন, তখন সরকারই চেষ্টা করছে সব কিছু আড়াল করতে। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির কথা বিশ্বব্যাংক প্রকাশ করার পরও কোন এক অদৃশ্য 'ভাবমূর্তি মাপনযন্ত্রে' পরীক্ষা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন এতে আমাদের ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়নি। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি হচ্ছে, অথচ সন্দেহভাজন অভিযুক্তরা আরো বেশি ক্ষমতাবান হয়ে উঠছে। শেয়ারবাজারের অব্যাহত দরপতন ও বিনিয়োগকারী বিশেষ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের রক্ষার দৃশ্যমান কোনো কার্যকর ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করতে পারছে বলে মানুষ মনে করছে না। অথচ সরকারি তদন্ত কমিটি যাদের শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতা বলে শনাক্ত করেছে, তাদের ওপরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাজার রক্ষার। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যথার্থই বলেছেন, 'শুঁটকির হাটে বিড়াল চৌকিদার'। দেয়ালে পিঠ ঠেকা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা যখন ডিএসইর সামনে আমরণ অনশনে নামেন, তখন মানবিক ও কৌশলী ভূমিকায় না গিয়ে সরকার পুলিশপেটা করে অনশনকারীদের হটিয়ে দেয়। এসব ঘটনা দুর্নীতিবাজদের আরো বেপরোয়া করে দিচ্ছে।
এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অর্থাৎ দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন রোধ করতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগের বিকল্প নেই। রাতের পরে দিন আসবে। এভাবে ঘুরে আসবে নতুন বছর, কিন্তু দিন বদলাবে না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন রোধ করতে পারলেই সম্ভব নতুন সূর্যোদয়ের। এই শর্ত পূরণ করতে পারলেই যথার্থ অর্থে দিন বদলে দেওয়ার পথ তৈরি হতে পারে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার দিন বদলের কথা বলে সাধারণ মানুষকে স্বপ্নবিলাসী করেছিল। জনগণের শক্তি-সমর্থনের প্রতি আস্থা থাকলে সেই স্বপ্নকে বাস্তবের উঠোনে নামিয়ে আনা এখনো কঠিন নয়। সরকার পরিচালকরা রাগ, অভিমান, ঈর্ষা, ক্ষোভ জাতীয় রিপুর তাড়না থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই তা সম্ভব। মেঠো বক্তৃতার বাইরে এসে আত্মবিশ্বাস দৃঢ় করতে না পারার কারণে আমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক রাজনীতিকরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সাহসী হন না। জনগণের ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলেও শেষ পর্যন্ত জনগণের শক্তির প্রতি আস্থা রাখতে পারেন না। ফলে টিকে থাকার জন্য নানা গলি-ঘুপচির সন্ধান করতে হয়। অযোগ্য, অকর্মণ্য আর দুর্নীতিবাজদের সঙ্গী করে দিনবদলের গন্তব্যে পেঁৗছা কঠিন। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন রোধ মুখের কথায় আর চটকদার নীতিনির্ধারণ করে সম্ভব নয়। মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার সামাজিক আন্দোলন আর আইনের শাসনই সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আইনব্যবস্থা যত দিন পর্যন্ত প্রায়োগিক ক্ষেত্রে স্বাধীন না হবে এবং পুলিশ প্রশাসন থেকে আদালত পর্যন্ত সব প্রতিষ্ঠান রাজনীতির প্রভাববলয় মুক্ত না হবে, তত দিন আইনের হাত দুর্নীতির টুঁটি চেপে ধরার মতো লম্বা হতে পারবে না। আমাদের রাজনীতি-জগতের ক্ষমতাবানরা যদি দেশপ্রেমিক হয়ে থাকেন, তবে সরকার ও বিরোধী দল সব দিকের দায়িত্ববানদের কর্তব্য হবে আইনকে সব প্রভাবমুক্ত হয়ে নিজের পথে চলতে দেওয়া। বর্তমান সরকারের মেয়াদ আর দুই বছর বাকি আছে। এখনো সময় আছে, নিজেদের নির্বাচনী ওয়াদার প্রতি সম্মান দেখিয়ে হলেও দুর্নীতি রোধে সরকার যদি আইনের যথাযথ প্রয়োগের পথ উন্মুক্ত করে দেয় এবং নিরপেক্ষভাবে ও যথার্থ অর্থে আইনের প্রয়োগ হচ্ছে কি না তা দলীয় দৃষ্টিতে নয়_সরকারি ব্যবস্থাপনায় মনিটর করে, তাহলে মানুষ নিশ্চয়ই এর ইতিবাচকফল দেখতে পারবে।
লেখক : অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.