পবিত্র কোরআনের আলো-কাবা গৃহের তত্ত্বাবধান করা আর ইমান এনে আল্লাহর পথে জিহাদ করা সমান নয়

৭. মা কা-না লিলমুশরিকীনা আন ইয়্যা'মুরূ মাছা-জিদাল্লা-হি শা-হিদীনা আ'লা- আনফুছিহিম বিল্কুফরি; উলা-য়িকা হাবিত্বাত্ আ'মা-লুহুম; ওয়াফিন না-রি হুম খা-লিদূন। ১৮. ইন্নামা- ইয়া'মুরু মাছা-জিদাল্লা-হি মান্ আ-মানা বিল্লা-হি ওয়ালইয়াওমিল আ-খিরি ওয়া আক্বা-মাস্ সালা-তা ওয়া আ-তায্ যাকা-তা ওয়া লাম ইয়াখ্শা ইল্লা-ল্লা-হা ফাআ'ছা- উলা-য়িকা আন ইয়্যাকূনূ মিনাল মুহ্তাদীন।


১৯. আজাআ'লতুম ছিক্বা-ইয়াতাল হাজ্জি ওয়া ই'মা-রাতাল মাছ্জিদিল্ হারা-মি কামান আ-মানা বিল্লা-হি ওয়ালইয়াওমিল্ আ-খিরি ওয়া জা-হাদা ফী ছাবীলিল্লাহি্; লা-ইয়াছ্তাওনা ই'নদাল্লাহি্; ওয়াল্লা-হু লা-ইয়াহ্দিল ক্বাওমায্ যা-লিমীন।
২০. আল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া হা-জারূ ওয়া জা-হাদূ ফী ছাবীলিল্লা-হি বিআমওয়া-লিহিম ওয়া আনফুছিহিম আ'যামু দারাজাতান ই'নদাল্লাহি্; ওয়া উলা-য়িকা হুমুল্ ফা-য়িযূন।
[সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ১৭-২০]

অনুবাদ : ১৭. মুশরিকরা আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, এটা তো হতেই পারে না; তারা তো নিজেরাই নিজেদের ওপর কুফরির সাক্ষ্য দিচ্ছে। মূলত তারা হচ্ছে সেসব লোক, যাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড বরবাদ হয়ে গেছে এবং চিরকাল তারা জাহান্নামের আগুনেই জ্বলবে।
১৮. আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে তো তারা, যারা আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের ওপর ইমান আনে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে; আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, তারাই হবে সঠিক পথপ্রাপ্ত মানুষদের অন্তর্ভুক্ত।
১৯. তোমরা কি হাজিদের পানি পান করানো ও মসজিদুল হারাম আবাদ করাকে সে ব্যক্তির কাজের সমপর্যায়ের মনে করো, যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে? তারা কখনোই আল্লাহর কাছে সমমর্যাদার হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা জালিমদের সঠিক পথ দেখান না।
২০. যারা ইমান এনেছে, (দ্বীনের প্রয়োজনে) হিজরত করেছে এবং নিজের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তাদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক ওপরে। আর তারাই সফলকাম।

ব্যাখ্যা : ১৭ ও ১৮ নম্বর আয়াতে মুশরিকরা যে আল্লাহর ঘর তথা বাইতুল হারামের তত্ত্বাবধানে যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে যে তা বুঝিয়ে বলা হয়েছে। মক্কার কুরাইশ গোত্রীয় মুশরিকরা এই বলে গর্ব করত যে তারা মসজিদুল হারামের তত্ত্বাবধায়ক। তারা এই পবিত্র মসজিদের চাবি রক্ষা করে এর খিদমত ও দেখাশোনা করে এবং এর মেরামতকাজের গৌরবময় দায়িত্ব পালন করে। এ হিসেবে তারা সমগ্র আরবের ওপর আভিজাত্যের দাবি করত। কিন্তু ইসলামের আবির্ভাবের পর যারা ইমান আনেনি, বরং মুশরিকই রয়ে গেছে, তারা যে আল্লাহর কাছে এ সম্মানের যোগ্যতা হারিয়েছে, সে সম্পর্কে তাদের কোনো উপলব্ধি ছিল না। তারা মসজিদুল হারামের ব্যাপারেও আগের মতোই নিজেদের আভিজাত্যেই বিশ্বাস করত।
এ আয়াতে তাদের সেই ভ্রান্ত ধারণা রদ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, মসজিদুল হারাম বা অন্য যেকোনো মসজিদের খিদমত করা নিঃন্দেহে এক বড় ইবাদত ও সম্মানের বিষয়। কিন্তু এর জন্য ইমান থাকা বা ইসলাম গ্রহণ করা শর্ত। সুতরাং শিরক বা কুফরে লিপ্ত কোনো ব্যক্তি মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক হওয়ার উপযুক্ত নয়। সামনে ২৮ নম্বর আয়াতে মুশরিকদের এই বিধান জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এখন থেকে তারা এসব কাজের জন্য মসজিদুল হারামের কাছেও আসতে পারবে না।
১৯ ও ২০ নম্বর আয়াত কাবা শরিফের খিদমত ও তত্ত্বাবধানসংক্রান্ত ইবাদতের চেয়ে ইসলাম রক্ষা ও প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম যে অনেক বড় ও উচ্চমর্যাদার, সে কথাটা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইবাদতসংক্রান্ত একটা মূলনীতিও প্রকাশিত হয়েছে। সে মূলনীতিটা হলো, সব নেককাজ সমমর্যাদার হয় না। কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী এর মর্যাদা নিরূপিত হয়। নিশ্চয়ই হাজিদের পানি পান করানো একটি মর্যাদাপূর্ণ কাজ। কিন্তু ইমান মানুষের মুক্তির জন্য বুনিয়াদি শর্ত। আর জিহাদ তখনকার অবস্থায় ছিল ফরজ। এমনকি হিজরত ও জিহাদের সঙ্গে প্রথমোক্ত কাজগুলোর কোনো তুলনা হয় না। আর হিজরত ও জিহাদ অনেক কঠিন ও বলিষ্ঠ মানসিকতার কাজ।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.