বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু-তুরাগতীরে লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায় by ইফতেখার মাহমুদ ও মাসুদ রানা

মবয়ানের মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুরু হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। গতকালও তুরাগতীরে লাখো মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করেন। গত শুক্রবার প্রথম পর্বেও লাখো মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করেছিলেন।
গতকাল ভোর থেকে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলো থেকে মুসল্লিরা ইজতেমার মাঠে আসতে থাকেন। জুমার নামাজের আগেই ইজতেমার মাঠ ও আশপাশের এলাকা ভরে যায়। জুমার নামাজের সময় টঙ্গী চৌরাস্তা, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও মুসল্লিদের সমাগম হয়। বিপুলসংখ্যক মুসল্লির সমাগমে বেলা ১১টা থেকে দুইটা পর্যন্ত টঙ্গী ও আশপাশের সড়ক এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। চালক ও যাত্রীরা যানবাহন থামিয়ে নামাজ আদায় করেন।
জুমার নামাজে ইমামতি করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা জুবায়ের। কাল রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে তাবলিগ জামাত আয়োজিত এবারের বিশ্ব ইজতেমা। ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমার প্রথম পর্ব।
বিশ্ব ইজতেমা গত বছর থেকে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতি পর্বে ৩২টি করে জেলার মানুষ অংশ নেন। তাবলিগ জামাত কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আসা মুসল্লিরা জেলাওয়ারি ৩৮টি খিত্তায় অবস্থান করছেন। টঙ্গী পৌরসভা ও গাজীপুর জেলা পরিষদ এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মুসল্লিদের জন্য তাঁবু টাঙিয়ে দিয়েছে।
গতকাল ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয় ভারত থেকে আসা তাবলিগ জামাতের মাওলানা এহসানের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে। আসরের নামাজের পর জোবায়েরুল হাসান এবং মাগরিবের নামাজের পর তাবলিগ জামাতের প্রবীণ মাওলানা সা’দ বয়ান করেন। উর্দু ভাষায় করা তাঁদের বয়ান বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করে শোনানো হয়।
মুরব্বিরা তাবলিগের ছয় ওছুলের মধ্যে দীনের দাওয়াতের জন্য পরিশ্রমের গুরুত্ব তুলে ধরেন। বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের ১৫-২০ জন শুরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান করবেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফার্সি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে।
অসুস্থতা ও মৃত্যু: গতকাল ইজতেমাস্থলে বিভিন্ন মেডিকেল ক্যাম্পে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিপুলসংখ্যক মুসল্লি চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই ডায়রিয়া, আমাশয়, সর্দি-কাশি, জ্বর ও হাঁপানি রোগে আক্রান্ত।
টঙ্গী হাসপাতালে বিকেল চারটা পর্যন্ত চার হাজার ১৬৩ জন মুসল্লি চিকিৎসা নেন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন সিরাজী জানান, অসুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও হূদেরাগজনিত আটজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এবং ১০ জন টঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
মাসলাহাল জামাতের আমির আদম আলী জানান, ইজতেমায় আসা সুনামগঞ্জের আফজাল হোসেন (৭৫) গতকাল ভোররাতে হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)।
গাজীপুরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তফা জানান, ইজতেমাস্থলে প্রতিদিন ৬৭ লাখ ২০ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
এর পরও বেলা ১১টার দিকে কূপ ও টয়লেটে পানি না থাকায় অনেক মুসল্লি গোসলসহ প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারেননি। নেত্রকোনার মুসল্লি নূরুল আমিন জানান, বেলা ১১টার দিকে তিনি গোসল করতে গিয়ে পানি পাননি, তাই গোসল করতে পারেননি।
সকালে আকাশের অবস্থা ভালো থাকলেও বিকেলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। এতে অনেক মুসল্লি বিড়ম্বনায় পড়েন। নেত্রকোনা থেকে আসা মুসল্লি আবুল হাশেম ও বগুড়ার আদমদীঘির মুসল্লি আনিসুর রহমান জানান, শীত-বৃষ্টি যতই হোক, আখেরি মোনাজাতে শরিক হবেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান: বিশ্ব ইজতেমায় জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ইজতেমাস্থল ও আশপাশের খাবারের দোকান ও হোটেলে ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য পরিবেশন ও ভেজাল খাদ্য বিক্রির কারণে বিভিন্ন খাবারের দোকান ও হোটেলের মালিকদের বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা এবং এক লাখ ২৭ হাজার ৪৭০ টাকা জরিমানা আদায় করেন আদালত।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল বিকেল চারটা পর্যন্ত টঙ্গী থানার পুলিশ ইজতেমাস্থল ও আশপাশের এলাকা থেকে ১৭ জন পকেটমার ও চোরকে আটক করে।

No comments

Powered by Blogger.