বন্ধুরাই হত্যা করে বিএনপি নেতা মিল্টনকে!-একজন এপিপির নামও এসেছে জবানবন্দিতে by এস এম আজাদ

রাজধানীর শেরে বাংলানগরের ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আবদুল বাকী মিল্টনকে হত্যা করেছে তাঁর বন্ধুরাই। অভিযুক্ত হিসেবে যাদের নাম উঠে এসেছে এবং যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা প্রত্যেকেই ছিল মিল্টনের ঘনিষ্ঠজন। আলাপচারিতার একপর্যায়ে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয় মিল্টনকে। ঘনিষ্ঠ এক আইনজীবীর সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।


আর টাকার বিনিময়ে এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় মামুন আহমেদ, কিসিঞ্জার মন্টু, সজলসহ মিল্টনের কয়েক বন্ধু। হত্যাকাণ্ডে অন্তত আটজন জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে তিন-চারজন পেশাদার সন্ত্রাসীও ছিল।
মিল্টন হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার করা মামুন আহমেদ ও আবুল কাশেম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে।
মামুন দাবি করেছে, আবুল কাশেমই মিল্টনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
অন্যদিকে কাশেম দাবি করেছে, সে হত্যা করেনি। সজলই গুলি করেছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আসামিদের জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে তাদের ভূমিকার বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তারা কী কারণে মিল্টনকে হত্যা করেছে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
মিল্টনের স্বজনরা দাবি করছেন, টাকা ও জমির প্রলোভনে বন্ধুরাই মিল্টনকে হত্যা করেছে। আর ঘটনাটি ঘটেছে সরকারি কেঁৗসুলি (এপিপি) আবু জাফর মোল্লার ইশারায়। অভিযুক্ত এই আইনজীবীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বুধবার সকালে শেরে বাংলানগর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের পাশে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের ভেতর থেকে মিল্টনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মিল্টন রাজধানীর ৪০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। তিনি এলাকায় কেব্ল্ ব্যবসা করতেন।
মিল্টন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে গত শুক্রবার মামুন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গতকাল রবিবার একই ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে কাশেম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরে বাংলানগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, চার আসামিকে গ্রেপ্তার করার পর মামলার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। অপর দুই আসামির মধ্যে কিসিঞ্জার মন্টুকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল সজলকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আজ সোমবার আবেদনের শুনানি হবে।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার করা সবাই নিহত মিল্টনের বন্ধু। বাদীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সন্দেহজনক হিসেবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জবানবন্দিতেই বের হয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় আট মাস আগে আগারগাঁও এলাকায় জনতা হাউজিংয়ে ফজিলাতুন্নেছা নামের এক নারীর জমি দখল নিয়ে দেন কাশেম, মিল্টন ও এপিপি আবু জাফর মোল্লা। পরে চুক্তি অনুযায়ী ফজিলাতুন্নেছা আগারগাঁওয়ে এক দশমিক ২১ একর জমি ওই তিনজনের নামে হস্তান্তর করেন। পুরো সম্পত্তিই নিজের একক মালিকানায় চাইছিলেন আইনজীবী জাফর। সম্প্রতি কাশেম ৭০ লাখ টাকায় ওই জমিটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এতে বাধা দেন মিল্টন। এ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় কাশেম ও মিল্টনের মধ্যে। মিল্টনকে মালিকানার দাবি থেকে সরাতে মিল্টনেরই বন্ধু মন্টু, সজল, রনি ও মামুনকে হাতে নেয় জাফর মোল্লা ও কাশেম। কাজ হলে প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়ার আশ্বাস দেয় কাশেম।
জানা গেছে, ঈদুল আজহার পরদিন মঙ্গলবার রাতে আগারগাঁওয়ে মিল্টনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান 'শেরে বাংলানগর কেব্ল্ নেটওয়ার্ক'-এর কার্যালয়ে আলোচনার কথা বলে মিলিত হয় আট-নয়জন। সেখানে সবাই ছিল মিল্টনের বন্ধু ও ঘনিষ্ঠজন। জবানবন্দিতে কাশেম দাবি করেছে, কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সজল পিস্তল দিয়ে মিল্টনকে তিন রাউন্ড গুলি করে। পরে সবাই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। মামুন দাবি করেছে, হত্যার পরিকল্পনা ছিল কাশেমেরই। বাকিরা সবাই টাকার বিনিময়ে অংশ নেয়। প্রথমে ভয়-ভীতি দেখিয়ে দলিলে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা চলে। এতে ব্যর্থ হওয়ার পরই গুলি করা হয়।
মিল্টনের স্ত্রী লাবণী জেসমিন নিজের বাসায় তালা দিয়ে পশ্চিম আগারগাঁওয়ে এক মামার বাসায় অবস্থান করছেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জমি নিয়ে মিল্টনের কয়েকজন বন্ধু মিল্টনের বিপক্ষে চলে যায়। তবে মিল্টন তাদের বিশ্বাস করে। ভাবে নাই ওরাই তাকে খুন করবে।'
মিল্টনের ভাই আবদুল বাতেন বলেন, 'টাকার লোভে কাছের মানুষরাই বেইমানি করেছে। ওই জমির কারণেই জাফর মোল্লার ইশারায় ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তারের পর কাশেম এসব কথা স্বীকার করেছে। আমরা ঘাতকদের বিচার চাই।'

No comments

Powered by Blogger.