বার্লুসকোনির পদত্যাগ ইতালিজুড়ে উল্লাস

তালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনি পদত্যাগ করেছেন। সরকারি ব্যয় সংকোচন সংবলিত অর্থনৈতিক সংস্কারের একটি বিল শনিবার ইতালির পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর বার্লুসকোনি পদত্যাগ করেন। শনিবার রাতে তিনি প্রেসিডেন্ট জর্জিও নাপোলিতানোর কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। ফলে ইতালিতে বার্লুসকোনির ১৭ বছরের শাসনের সমাপ্তি ঘটল। তার পদত্যাগের পর ইতালির জনগণ রাজপথে উল্লাস করেছে। রাজধানী রোমসহ ইতালিজুড়ে উল্লাসে মেতে ওঠে জনতা।


এদিকে বার্লুসকোনির পদত্যাগের পর নতুন সরকার গঠনের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট নাপোলিতানো গতকাল রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করেছেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাবেক কমিশনার বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মারিও মনতিকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে টেকনোক্র্যাট কোটায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সের।
ঋণ সংকটকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় বার্লুসকোনির সরকার। প্রধানমন্ত্রী সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে নতুন ব্যয় সংকোচন বিল পাস হলে তিনি পদত্যাগ করবেন। শনিবার পার্লামেন্টে অর্থনৈতিক সংস্কার বিলটি পাসের কয়েক ঘণ্টা পরই প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এদিকে রাজধানী রোমসহ সারাদেশের মানুষ সিলভিও বার্লুসকোনির পদত্যাগে উল্লাস প্রকাশ করেছে। শনিবার রাতে তিনি যখন তার পদত্যাগপত্র নিয়ে প্রেসিডেন্ট নাপোলিতানোর প্রাসাদে ঢুকছিলেন তখন শত শত উৎফুল্ল মানুষ তাকে 'ভাঁড়' বলে উপহাস করেন। বিপুল সমর্থন নিয়ে ১৯৯৪ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন বার্লুসকোনি। মাঝে বিরতি দিয়ে এরপর আরও দু'বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন ৭৫ বছর বয়সী এ ব্যবসায়ী; কিন্তু দুর্নীতি ও যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে তার বিদায়ের চিত্র ছিল ক্ষমতা আরোহণের ঠিক বিপরীত।
পদত্যাগের পর আবার অপমানের হাত থেকে রক্ষা পেতে বার্লুসকোনি প্রাসাদের অন্য একটি গেট দিয়ে চুপিসারে বেরিয়ে যান। বিক্ষুব্ধ জনতা বার্লুসকোনির বাসভবনের সামনেও উল্লাস করে। এ ছাড়া পার্লামেন্ট ভবনের সামনেও উল্লাসে মেতে ওঠে অনেকে।
রোববার সরকারি ছুটির দিনও প্রেসিডেন্ট নাপোলিতানো সিনিয়র রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং আজ পুঁজিবাজারগুলো খোলার আগেই নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে পার্লামেন্টে অনুমোদিত ব্যয় সংকোচন আইন বাস্তবায়নে বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ আইন বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারি বহু খাতে ব্যয় হ্রাস করতে হবে এবং বহু লোক চাকরি হারাবে।
গত সপ্তাহে ইতালির সরকারি ঋণপত্রের বিপরীতে সুদের হার রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটি ইউরো জোনের ঋণ সংকটে জর্জরিত পরবর্তী দেশ হতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা দেখা দেয়। এর আগে গ্রিস, আয়ারল্যান্ড ও পর্তুগালের সরকারি ঋণপত্রে সুদের হার শতকরা ৭ ভাগে পেঁৗছার পর ওই দেশ তিনটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল।ইতালির মিডিয়া মোগল হিসেবে পরিচিত বার্লুসকোনি পদত্যাগের পর কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে সংবাদ সংস্থা আনসা বার্লুসকোনিকে উদ্ধৃত করে জানায়, বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তার এ পদত্যাগ।ইতালির অন্যতম ধনী ব্যক্তি বার্লুসকোনি ১৯৯৪, ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্বাচনে জিতে তিনবার মধ্য ডানপন্থি সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন। তবে ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালের নির্বাচনে হার মানতে হয় তাকে।
৯০০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক বার্লুসকোনি মিডিয়া ও ক্রীড়া জগৎ নিয়েই ছিলেন। কয়েকটি সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকানার পাশাপাশি ফুটবল ক্লাব এসি মিলানও তার। ১৯৯৩ সালে রাজনীতিতে নেমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। বলা হয়, তার পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এ ক্ষেত্রে হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।

No comments

Powered by Blogger.