পিটার রোবাকের আত্মহত্যা

ক্রিকেট দুনিয়ায় পিটার রোবাককে নিয়ে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে_ খেলাটা যদি কেউ পছন্দ না করে তাহলে সে যেন পিটার রোবাকের ধারাভাষ্য বা তার লেখা কলাম পড়ার অভ্যাস করে। ক্রিকেটটা তিনি এতটা হৃদয়গ্রাহী আর উপভোগ্য করে বর্ণনা করেন যে, ক্রিকেটের সঙ্গে একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে না তুলে আর উপায় থাকে না; কিন্তু এতদিন যারা এ কাজটি করেননি তাদের সামনে আর এ সুযোগ থাকছে না। ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত এ অস্ট্রেলিয়ানের ধারাভাষ্য আর শোনা যাবে না, পত্রিকার পাতায় আর প্রকাশিত হবে না তার নতুন কোনো কলাম।


মাত্র ৫৫ বছর বয়সে এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন তিনি। চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। জোহানেসবার্গের এক হোটেলে গত শনিবার রাতে তিনি আত্মহত্যা করেন। হোটেল রুম থেকে পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। তবে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, যৌন হয়রানির অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় পুলিশের উপস্থিতিতে ছয়তলা থেকে লাফিয়ে রোবাক আত্মহত্যা করেন। এদিকে পুলিশের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ফ্রেডেরিক ভ্যান উইক বলেন, 'শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।' বিখ্যাত এ ক্রিকেট কলামিস্ট অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে চলতি টেস্ট সিরিজ কভার করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন। সিডনি মর্নর্িং হেরাল্ড এবং এবিসি রেডিওর হয়ে তিনি কাজ করছিলেন।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের ম্যানেজিং এডিটর রোবাকের এ অকাল মৃত্যুকে পত্রিকার জন্য এবং তার নিজের জন্য ধ্বংসাত্মক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, 'পিটার ছিলেন অসাধারণ এক ক্রিকেট লেখক। ক্রিকেটপ্রেমী অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে তার জনপ্রিয়তার শেষ ছিল না।'
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার ইয়ান চ্যাপেল বলেন, 'কোনো একটা অজুহাত নিয়ে আমি তার সঙ্গে প্রায় কথা বলতাম। কেননা তার সঙ্গ আমি দারুণ উপভোগ করতাম। সবসময় মনে করতাম, তার কাছ থেকে আমি কিছু না কিছু শিখছি। সময় যত যাচ্ছিল তাকে আমি আরও বেশি করে চিনতে শুরু করেছিলাম। একটু একাকী থাকতে পছন্দ করত; কিন্তু প্রেস বক্সে সত্যিই দারুণ এক সঙ্গী ছিল সে। ফেয়ারফ্যাক্স সংবাদপত্রের প্রধান গ্রেগ হাইউড বলেন, 'পিটার শুধু হেরাল্ড ও দ্য এজে লেখা দুর্দান্ত এক ক্রিকেট কলমালিস্ট না, সে অস্ট্রেলিয়ার একজন জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকারও ছিল।'
১৯৫৬ সালের ৬ মার্চ অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন রোবাক। শিক্ষক পিতামাতার ছয় সন্তানের একজন রোবাক ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। তার বাবা ক্রিকেটের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। মা শুধু সমর্থকই নন, ছিলেন ক্রিকেটারও। রোবাকের এক বোনও ক্রিকেটার ছিলেন। ফলে ক্রিকেটার হওয়ার পথে কখনও বাধা পাননি তিনি। ধীরে ধীরে ক্রিকেটকে জীবনের অংশে পরিণত করেন। সমারসেটের হয়ে দারুণ সময় কাটিয়েছেন এ ব্যাটসম্যান। আশির দশকে এই কাউন্টি দলের নেতৃত্বও দেন তিনি। এমনকি ইংল্যান্ড দলকেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে ইংল্যান্ড হল্যান্ডকে হারিয়েছিল। ৩৩৫টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন রোবাক। ১৭৫৫৮ রান করেন। সেঞ্চুরি করেছেন ৩৩টি। যে কোনো সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে কখনোই তিনি পিছপা হতেন না। সে কারণে সমারসেটে দুর্দান্ত সময়টা শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে ইতি হয়নি। সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে মতৈক্যের কারণেই সবকিছু কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে। সমারসেটে তখন
খেলতেন জোয়েল গার্নার এবং ভিভ রিচার্ডস। বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে রোবাক এ দুই নামি তারকার চুক্তি নতুন করে নবায়নের পক্ষে ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত গার্নার ও ভিভকে বিদায় নিতে হয়; কিন্তু অন্যদের সঙ্গে রোবাকের সম্পর্কের
অবনতি ঘটে।

No comments

Powered by Blogger.