কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে আইনি জটিলতার শঙ্কা-নির্বাচন অনুষ্ঠানের শেষ সময় ১ জানুয়ারি by কাজী হাফিজ

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন নিয়ে আইনি জটিলতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিটির দুটি ওয়ার্ডের নির্ধারিত সীমানা ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করার ইস্যুতে আপত্তি উঠতে পারে_এমন আশঙ্কা নির্বাচন কমিশনের। এ আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত সত্যি হলে আগামী ১ জানুয়ারির মধ্যে এ সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠান কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। অথচ উলি্লখিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা গতকাল রবিবার কয়েক দফা আলোচনাও করেছেন।


নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, কুমিল্লা সিটির দুটি এলাকা ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের লালমাই ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ গোপীনাথপুর নিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের একজন গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা ও কুমিল্লার জেলা প্রশাসক রেজাউল আহসান গত ২০ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর বিষয়টি সম্পর্কে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন তাতে বলা হয় যে আগের কুমিল্লা পৌরসভার ওয়ার্ডগুলোর সীমানা/চৌহদ্দি বহাল রেখেই সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলোর সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগের এক ওয়ার্ডের অংশবিশেষ বাদ দেওয়া বা অন্য ওয়ার্ডের সঙ্গে যুক্ত করার ঘটনা ঘটেনি। অথচ এই সিটির সীমানাসংক্রান্ত গেজেটে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সঙ্গে লালমাইয়ের আংশিক এবং ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সঙ্গে দক্ষিণ গোপীনাথপুরের আংশিক এলাকা রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনে এ তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে যে সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে দাবি/আপত্তি জানানোর নির্ধারিত সময়ে মোট ২১টি দাবি/আপত্তি জমা হয়। এ-গুলোর মধ্যে ১৫টি আপত্তি ছিল এক ওয়ার্ডের অংশবিশেষ অন্য ওয়ার্ডে যাওয়া এবং এক ওয়ার্ডের সঙ্গে অন্য ওয়ার্ডের আয়তনের সমতা নিয়ে। গত ১৮ অক্টোবর এসব দাবি-আপত্তির বিষয়ে শুনানি হয় এবং ২০ অক্টোবর সীমানা চূড়ান্ত করা হয়। আপত্তির বিষয়ে তিনি তাঁর প্রতিবেদনে আরো বলেন, ডিলিমিটেশন অফিসার তদন্ত করে জেনেছেন যে স্থানীয় বাসিন্দারা নির্ধারিত সীমানাকেই সমর্থন করছেন। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, অতীতে নির্বাচন স্থগিতের অনেক ঘটনাই ঘটেছে সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত এ ধরনের জটিলতা থেকে। আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে এ বিষয়টিই শেষ পর্যন্ত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এদিকে ওই দুই ওয়ার্ডের খণ্ডিত সীমানার ভোটার তালিকা কিভাবে করা হবে, সে পদ্ধতি নির্ধারণ নিয়ে গতকাল সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তাদের ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুসারে আগামী সাত দিনের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাসের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কুমিল্লার প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতা তাঁর লোকজনকে দিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে বলেন, 'সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা নিয়ে কেউ যদি আইন-আদালত করেন এবং তাতে যদি নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়, তাতে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সব কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।'
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সফল হওয়ার পর বর্তমান নির্বাচন কমিশনাররা তাঁদের মেয়াদে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন না করার পক্ষে অবস্থান নেন। গত ১ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নারায়ণগঞ্জের তুলনায় কুমিল্লায় এ কাজটি বেশ জটিল হবে বলেই আমাদের ধারণা। নারায়ণগঞ্জে ওয়ার্ডগুলোর আগের সীমানায় বহাল রাখা হয়েছে। কিন্তু কুমিল্লাতে তা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। সীমানা নির্ধারণী গেজেট প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে যে আইন-আদালত হবে না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ বাস্তবতায় সম্ভবত আমরা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন করে যেতে পারব না।' কিন্তু পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণী গেজেট প্রকাশের উদ্যোগ নিলে নির্বাচন কমিশনের ওই অবস্থানের পরিবর্তন হয়। গত ৯ নভেম্বর এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'আমাদের মেয়াদের মধ্যেই নির্ধারিত সময়সীমা অনুসারে এ নির্বাচন সম্পন্ন করে যেতে হবে। অন্যথায় আইনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।'
শেষ সময়সীমা ১ জানুয়ারি : নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগে বলা হয়েছিল, আইন অনুসারে আগামী ৫ জানুয়ারি হচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শেষ দিন। কিন্তু গতকাল নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ৫ জুন নয়, তারিখটি ১ জানুয়ারি।কর্মকর্তারা জানান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় চলতি বছরের ৬ জুলাই এবং গেজেট প্রকাশ হয় ১০ জুলাই। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের ৩৪ ধারা অনুযায়ী করপোরেশন গঠনের পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এ বিধান অনুযায়ী ১৮০ দিনের গণনা শুরু হবে ৬ জুলাই থেকে। এই হিসাবে আগামী ১ জানুয়ারির মধ্যেই এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আগে ১০ জুলাই থেকে ওই গণনা করায় ভুল তারিখ প্রকাশ পায়।
জানা যায়, নির্বাচন কর্মকর্তারা কমিশনে উত্থাপনের জন্য যে প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছেন তাতে ৩০ অথবা ৩১ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.