তফসিল ঘোষণার আগেই সরগরম কুমিল্লা

ফসিল ঘোষণার আগেই সরগরম হয়ে উঠেছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং শুরু করেছেন। চলছে ঢাকা-কুমিল্লায় দৌড়ঝাঁপ। পোস্টার, প্লাকার্ড ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নগরী। দিন-রাত সমান তালে জনসংযোগ চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশন এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার কথা জানানোর পরপরই নগরীজুড়ে ভোটের হাওয়া বইছে। আইনানুযায়ী আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।


১০ জুলাই কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভা একত্র করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয়।
কুমিল্লা সদর (কুমিল্লা-৬) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার নির্বাচনে প্রার্থিতা সম্পর্কে বলেন, দল চাইলে তিনি সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করবেন। তিনি জানান, কুমিল্লা পৌরসভার দু'বার নির্বাচিত সফল মেয়র ছিলেন তিনি। তার চেষ্টায় কুমিল্লা পৌরসভা প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পায়। '৭৩-এর পর তিনি সদর আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি প্রতি শুক্রবার কুমিল্লা টাউন হলে বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশ করে চলেছেন।
অপর সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক ও বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা অ্যাডভোকেট আফজল খান বলেন, দলীয় সমর্থন নিয়ে জীবনের শেষ বয়সে তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করতে চান। কুমিল্লার জনগণ তাকে নির্বাচিত করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অধিকারী এ নেতা বলেন, দল সমর্থন না দিলে তিনি নির্বাচন করবেন না। তিনি সকাল-বিকেল জনসংযোগ করে চলছেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান মিঠু জানান, তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করবেন। তরুণ প্রজন্মের ব্যাপক সমর্থন তার প্রতি রয়েছে। তিনি নগর উন্নয়নে মহাপরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। তার দাবি_ দল সঠিক, যোগ্য নেতৃত্ব দিতে চাইলে তাকে সমর্থন দেবে। আনিছুর রহমান মিঠু জানান, তিনি প্রতিটি এলাকার বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করেছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি
আলহাজ ওমর ফারুক দলীয় সমর্থন পেলে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, তিনি দলীয় সমর্থন পেলে মেয়র পদে নির্বাচন করবেন। গত সংসদ নির্বাচনে তিনি সামান্য ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। তার ধারণা নগরীর ওই ভোটাররা তাকে মেয়র পদে নির্বাচিত করতে সহায়তা করবেন। তিনি প্রতিদিন জনসংযোগ করে চলছেন।
বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভার সদ্য বিদায়ী মেয়র ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু বলেন, তিনি পৌর মেয়র হিসেবে তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান। তিনি জানান, দল তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাকে মেয়র পদে সমর্থন দেবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সল্ফপৃক্ততার কারণে এমনিতে তার জনগণের সঙ্গে একটা সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়াও মেয়র হিসেবে দীর্ঘদিন নগরীর মানুষ তাকে কাছে পেয়েছে। তিনিও দিন-রাত জনসংযোগ করে চলছেন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী দলীয় সমর্থন পেলে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এয়ার আহমেদ সেলিম বলেন, তিনি দলের একমাত্র প্রার্থী। ইতিমধ্যে দলের প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কুমিল্লার এক জনসভায় তাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আমি দু'বার পৌর চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। সব সময় কুমিল্লার মানুষের পাশে ছিলাম। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। তিনিও ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন।
২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৭ জন কাউন্সিলর ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৯ জন মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে অসংখ্য সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী নানামুখী প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ১ লাখ ৬৯ হাজার ১৭৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ৮৩ হাজার ১২৯ জন পুরুষ ও ৮৬ হাজার ৪৫ জন মহিলা ভোটার রয়েছেন।
দুই নির্বাচন কর্মকর্তা বদলি
কুমিল্লার দুই পদস্থ নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। নতুন আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কমিশন থেকে উপ-সচিব আবদুল বাতেন যোগদান করেছেন। তিনি আনোয়ার হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। আনোয়ার হোসেন উপ-সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে নির্বাচন কমিশনে যোগদান করেছেন। কুমিল্লা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদকে ঢাকা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে বদলি করা হয়েছে। কুমিল্লার নতুন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আবদুল হালিম খান। তিনি রোববার কুমিল্লায় তার কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। আবদুল বাতেন কুসিক নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে।
নির্বাচনে আওয়ামী জোট সরকারকে কঠিন জবাব দেব
বিএনপি কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সভাপতি রাবেয়া চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। কেন্দ্র যদি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে এ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা স্বৈরাচারী আওয়ামী জোট সরকারকে কঠিন জবাব দেব। আমাদের প্রার্থী ও সব কর্মীবাহিনী ঠিক করা আছে। সিদ্ধান্ত পেলে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বে।
রোববার সন্ধ্যায় কুমিল্লার একটি কমিউনিটি সেন্টারে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন মেয়র প্রার্থী বিএনপি নেতা হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াসিনের সমর্থনে আয়োজিত কুমিল্লা দক্ষিণ জেল যুবদলের কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদল সভাপতি আমিরুজ্জামান আমিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মিসভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা মোস্তফা জামান, যুবদল সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, যুবদল নেতা নজরুল ইসলাম, মহিলা দল নেত্রী সাকিনা বেগম, যুবদল নেতা মাঈন উদ্দিন প্রমুখ।
রাবেয়া চৌধুরী আরও বলেন, জাতি ইভিএম পদ্ধতি চায় না। কুমিল্লার সব কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে কারচুপির আশঙ্কা থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.