বারলুসকোনির পদত্যাগ-অর্থনৈতিক সংস্কার প্যাকেজ পাস

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অর্থনৈতিক সংস্কারবিষয়ক সরকারি পরিকল্পনা (প্যাকেজ) পাস হওয়ায় পদত্যাগ করেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনি। জরুরি ভিত্তিতে ব্যয় সংকোচন নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রণীত পরিকল্পনাটি গত শনিবার নিম্নকক্ষে ৩৮০ ভোটে পাস হয়। বিপক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ২৬টি। দুজন আইনপ্রণেতা ভোটদানে বিরত ছিলেন। ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ইউরোর ঋণ মোকাবিলার লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দিকনির্দেশনায় ওই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।


আগের দিন শুক্রবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে ওই পরিকল্পনা পাস হয়। শনিবার নিম্নকক্ষে চূড়ান্তভাবে পাস হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই প্রেসিডেন্ট জর্জিও নাপোলিতানোর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন ৭৫ বছর বয়সী বারলুসকোনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি সময় ইতালির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ধনকুবের ও মিডিয়া ব্যবসায়ী বারলুসকোনির পদত্যাগে বিরোধী শিবিরে আনন্দের ঢেউ লেগেছে।
গত শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে গিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন বারলুসকোনি। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে যাওয়ার সময় রাস্তায় বিরোধী শিবিরের বিপুলসংখ্যক সমর্থকদের তোপের মুখে পড়ে বারলুসকোনির গাড়ির বহর। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ রাস্তায় বারলুসকোনিবিরোধী স্লোগান দেয়। ওই সময় তাদের হাতে ছিল ইতালির জাতীয় পতাকা। বিক্ষুব্ধ লোকজন এ সময় বারলুসকোনিকে 'মাফিয়া', 'ভাঁড়' ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করে। তারা বিদ্রূপ করে বলতে থাকে_'তোমার মরা উচিত, সিলভিও।'
১৭ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বারলুসকোনিকে ঘিরে অনেক বিতর্কের জন্ম হয়েছে। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও যৌন কেলেঙ্কারি-বিষয়ক বেশ কয়েকটি মামলার বিচার চলছে। তবে তাঁর বাসভবনের সামনে বিপরীত চিত্র চোখে পড়ে। সেখানে সমবেত হওয়া সমর্থকরা বারলুসকোনির পদত্যাগে দুঃখ প্রকাশ করে।
এদিকে বারলুসকোনির পদত্যাগের পর নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রেসিডেন্ট নাপোলিতানো। আশা করা হচ্ছে, আজ সোমবার নতুন সরকারের প্রধানসহ তাঁর মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করা হবে। নতুন সরকারপ্রধান হিসেবে ইউরোপীয় কমিশনের সাবেক কমিশনার মারিও মন্তির নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে।
বারলুসকোনির রক্ষণশীল ফ্রিডম পার্টির (পিডিএল) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা অনুযায়ী মন্তি যতক্ষণ ঋণ মওকুফে কঠোর ভূমিকা রাখবেন, ততক্ষণ তারা তাঁকে সমর্থন দিবে। দলটির দাবি, আলোচনার ভিত্তিতে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে এবং সরকারের মেয়াদকাল হবে সীমিত। তবে পিডিএলের এসব কঠোর শর্ত মেনে নেওয়া সাপেক্ষে মন্তি দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হবেন কি না, সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
নতুন প্রধানমন্ত্রীর সামনে ব্যয় সংকোচনবিষয়ক পরিকল্পনার বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতালিতে ইতিমধ্যে ঋণের সুদের হার রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। ঋণ নিতে ইতালি সরকারকে যে সুদ দিতে হয়, গত সপ্তাহে তার হার সাত শতাংশে পেঁৗছেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোজোনের মধ্যেও অর্থনেতিক সংকটের আশঙ্কা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান বারলুসকোনি। সূত্র : টেলিগ্রাফ, বিবিসি, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.