সবচেয়ে পেশাদার দল নেদারল্যান্ডস! by কামরুল হাসান

মিষ্টি হাসির যে মেয়েটা এবারের মহিলা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে আইসিসির মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁর নাম লুসি বেঞ্জামিন। ব্রিটিশ এ তরুণী কথাও বলেন খুব সুন্দর করে। তবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে এসে তাঁর সুন্দর কথা আর মিষ্টি হাসি হঠাৎ করে উধাও! বেশ মুখ গোমরা করে বললেন, 'আমি খেয়াল করলাম তোমরা সব দেশের অধিনায়ককেই কোনো না কোনো প্রশ্ন করেছ, কিন্তু কেউ নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ককে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করেনি! মেয়েটা সারাক্ষণ চুপচাপ বসে আছে!


' তারপর নীরব ডাচ অধিনায়ককে মুখর করতে সাংবাদিকরা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই লুসি বলা শুরু করলেন, 'বাছাই পর্ব খেলতে যে কয়টা দল এসেছে তার মধ্যে নেদারল্যান্ডসই সবচেয়ে পেশাদার! পাইলট, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবী থেকে শুরু করে অনেক পেশাজীবী তাদের দলে!'
তথ্যটা হয়তো এ দেশের অনেক সাংবাদিকের জানা। কিংবা জানা না থাকলেও অনুমেয়। তার পরেও সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ছোট্ট একটা হাসির রোল উঠল। সে হাসিতে যোগ দিলেন স্বয়ং ডাচ অধিনায়ক হেলমিন রামবালদো। উপমহাদেশ আর এর বাইরে পাঁচ-ছয়টা দেশ ছাড়া ক্রিকেট খেলাটাকে ওইভাবে চিনেই বা কতজন? সেই খেলারই মহিলা বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব খেলতে ক্রুইফ-ফন বাস্তেনদের দেশ থেকে আসা দলে পেশাদার ক্রিকেটার? এতটা আশা করা বোকামি বৈকি! আর শুধু নেদারল্যান্ডসের কথাই বা বলা হবে কেন? অন্য দলগুলোতেও তো কোথাও ৫৪ বছরে বৃদ্ধা আবার কোথাও ১৩ বছরের কিশোরী! তবে ছুড়ি থেকে বুড়িদের এই বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব নিয়েও যে জল্পনা-কল্পনা বা আগ্রহ তৈরি হয়েছে সেটা মিরপুর ক্রিকেটপাড়া বা গতকাল সংবাদ সম্মেলনে না গিয়ে থাকলে বোঝার উপায় নেই। ১০ দেশের ১০ অধিনায়কের পরিচিতি পর্ব আর সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে এত সংবাদমাধ্যম চলে এসেছে যে প্রশ্নবাণ আর ক্যামেরার ফ্লাশের ঝলকানিতে নার্ভাস হয়ে একসময় বাংলাদেশের অধিনায়ক সালমা খাতুন বলেই ফেললেন, 'আমি এর আগে একসঙ্গে এত বেশি সাংবাদিকের মুখোমুখি হইনি। একটু অন্য রকম লাগছে।' যে অনুষ্ঠান নিয়ে এত আগ্রহ তা কিন্তু শুরুও হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের বেশ পরে। সেটাও এক কারণ। বাকি সব অধিনায়ক তৈরি কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক মেরিসা আগুইলিয়েরাকে। শেষমেশ জানা গেল বাংলাদেশে আসার পরই নাকি অল্প অসুস্থ হয়ে গেছেন তিনি। তাঁর বদলে সংবাদ সম্মেলনে আসলেন সহ-অধিনায়ক স্টিফানি টেইলর। তাঁকে পেয়ে অবশ্য সাংবাদিকরা বেশ খুশি। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান এই তরুণী আবার এবারের আইসিসি বর্ষসেরা মহিলা ক্রিকেটার হয়েছেন কিছুদিন আগে। বিশ্বসেরা মহিলা ক্রিকেটার হওয়ায় তাঁর ওপর বাড়তি কোনো চাপ থাকছে কি না_এ প্রশ্নের উত্তরে স্টিফানি ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে যা বললেন তাতে বোঝা গেল, মাঠে কোনো চাপ না অনুভব করলেও হয়তো ইংরেজিতে আরো কিছু কথা বলতে গেলে সামলাতে পারবেন না তিনি! ভাষা নিয়ে এ সমস্যায় পড়েছিলেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দিলানি মানোদারাও। কিন্তু উইকেটরক্ষক-কাম ব্যাটসম্যান এ তরুণী শুরুতেই জানিয়ে দিলেন, 'আমার ইংরেজি খুব দুর্বল, তোমরা হয়তো আমার সব কথা বুঝতে নাও পারো, আমি আগে থেকেই দুঃখ প্রকাশ করছি।'
সব মিলিয়ে বেশ মজার অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন শেষ পর্যন্ত আমাদের অধিনায়ক সালমাই। তার ওপর আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া আসরের উদ্বোধনী ম্যাচেই মাঠে নামছে তাঁর দল, প্রতিপক্ষ খুব চেনা শত্রু পাকিস্তান। এশিয়ান গেমসে সেই হারের লজ্জা ভুলে এবার কি নতুন কিছু করতে পারবেন বাংলাদেশের মেয়েরা? অধিনায়ক কিন্তু আশ্বাস দিয়েছেন, প্রাথমিক লক্ষ্য গ্রুপ পর্যায় পেরিয়ে সেরা ছয়ে যাওয়া। তারপর না হয় নতুন করে লক্ষ্য ঠিক করা যাবে। সেটাই বা কম কিসে। এই আসরে সেরা ছয়ে থাকতে পারলেই তো বাংলাদেশের মেয়েদের ওয়ানডে স্ট্যাটাস নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। তারপর বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নটা কী আর অধরা থেকে যাবে?

No comments

Powered by Blogger.