রমজানে চিনি সংকট-বেশি মুনাফা পেতে উৎপাদন বন্ধ রাখে চার চিনিকল! by আবুল কাশেম

সংকট সৃষ্টি করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে রমজান মাসের আগেই মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, পারটেঙ্ গ্রুপ এবং দেশবন্ধু গ্রুপ চিনিকলের উৎপাদন বন্ধ রাখে! রোজায় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির করে মুনাফা হাতিয়ে নিতেই মিলগুলো এ পদক্ষে নিয়েছিল। এমনটাই মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভবিষ্যতে মিল বন্ধ রাখার আগে যৌক্তিক কারণসহ মন্ত্রণালয়কে তা অবহিত করার নির্দেশ দিয়ে সব চিনিকলকে সতর্ক করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।


একই সঙ্গে পারটেঙ্ গ্রুপ দীর্ঘদিন মিল চালু না করায় তাদের আমদানি সনদ বাতিল করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে রেজিস্ট্রার, জয়েন্ট স্টক কম্পানিজ ও ফার্মের পরিদপ্তরকে চিঠি পাঠাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে গতকাল রবিবার জানান, চিনিকলগুলোকে সতর্ক করে দিতে চিঠি প্রস্তুত করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করে, রমজানের আগে ইচ্ছাকৃতভাবে মিলগুলো বন্ধ রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে মিল বন্ধ করার আগে যৌক্তিক কারণসহ তা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। আর পারটেঙ্ গ্রুপের আমদানি সনদ বাতিলের নির্দেশ দিয়ে রেজিস্ট্রার, জয়েন্ট স্টক কম্পানিজ ও ফার্মকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
অবশ্য ট্যারিফ কমিশনে অবস্থিত কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের এক কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে জানান, পারটেঙ্ গ্রুপ গত দুদিন পরিবেশকদের মধ্যে চিনি সরবরাহ করছে বলে গ্রুপটির পক্ষ থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে। বাকি তিনটি গ্রুপ রমজানের শেষের দিকে ও রমজানের পরে মিলগুলো চালু করেছে।
রমজানে বাজারে চিনির সংকট সৃষ্টি করতে এক মাস আগে থেকেই চিনি সরবরাহ বন্ধ রাখে কয়েকটি মিল! কাঁচামাল সংকটের কথা বলে উৎপাদনও বন্ধ রাখে তারা। ওই সময়ই বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান চিনিকল মালিকদের সভাপতি ও সিটি গ্রুপের কর্ণধার ফজলুর রহমানকে ফোন করে চারটি মিল একসঙ্গে বন্ধ রাখার কারণ জানতে চান। পরবর্তী সময়ে মিলমালিকদের কাছে একসঙ্গে চারটি মিল বন্ধ রাখার কারণ জানতে চেয়ে চিঠি পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মিলগুলো সংস্কার কার্যক্রমের (বিএমআর) কারণ দেখায় তখন; কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।
সম্প্রতি মেঘনা গ্রুপ কালের কণ্ঠকে জানায়, 'আমাদের চিনিকলে র' সুগার মজুদ না থাকায় গত ১৭ জুন থেকে উৎপাদন বন্ধ থাকে। দেশবন্ধু সুগার মিল থেকে ধার নিয়ে ২৬ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত চিনিকল সচল রেখে চিনি সরবরাহ করে তারা। র' সুগারের অভাবে আবারও মিল বন্ধ থাকে। আমাদের র' সুগার আমদানি হলে মিল আবারও ৮ আগস্ট থেকে চালু করা হয়।'
ওই কর্মকর্তা জানান, কোনো কোনো মিল রমজানের আগের এক মাসজুড়ে পরিবেশক প্রথার আওতায় কোনো চিনিই সরবরাহ করেনি বাজারে। এ ছাড়া রমজানের প্রথমার্ধে বাজারে যখন চিনির তীব্র সংকট ওই সময়ও কয়েকটি মিল উদ্দেশ্যমূলকভাবে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দেয়। ওই সময় বাজারে চিনির দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শক্ত অবস্থানে চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক করেছিল তারা। ঈদুল ফিতরের পর চিনির সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিয়ে বাজারে আবারও বাজারদর অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে মিলগুলো। রোজায় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিতেই মিলগুলো বন্ধ রাখেন তাঁরা। এমনকি মিলগুলোয় পর্যাপ্ত চিনি থাকলেও রমজানের শুরুতে পরিবেশকদের কাছে তা সরবরাহ করা হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিজস্ব অনুসন্ধানে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.