কোন লক্ষ্যে আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দেবে ভারত?

ভারত তার অন্যতম শীর্ষ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনারা চলে যাওয়ার পর সেখানে প্রভাব জোরদার করার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে ভারত। এতে পাকিস্তানের মধ্যে নিরাপত্তাভীতি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আফগান সেনাবাহিনীর জন্য হালকা অস্ত্র সরবরাহ ও দেশটির বিমানবাহিনীর চালকসহ অন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণও দেবে ভারত। দুই দেশের মধ্যে গত মাসে স্বাক্ষরিত কৌশলগত অংশীদারি চুক্তি অনুযায়ী ভারত এসব সহায়তা দেবে।
এখন পর্যন্ত আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে হালকা কিছু প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে ভারত। তবে সেটা সুনির্দিষ্ট কোনো প্রশিক্ষণ নয়, কর্মকর্তারা কিছু তাত্ত্বিক কোর্স করতেন ভারতে এসে। কিন্তু এখন নতুন চুক্তির ফলে ভারত আনুষ্ঠানিক ও সুগঠিতভাবে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারবে।
ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আফগান সেনাবাহিনীর সদস্য ও ভবিষ্যৎ-প্রশিক্ষকদের মহৌ আর্মি ওয়ার কলেজে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে আমি জানি।’ মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত মহৌ আর্মি ওয়ার কলেজ ভারতের অন্যতম সেনা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রকৃত অভিযান চালানোর জন্য সেনাসদস্যদের সক্ষম করে তুলতে সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।
আফগান সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষিত করে তোলার পাশাপাশি রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ-লাইন ও বাঁধ নির্মাণে আফগানিস্তানকে দুই হাজার কোটি ডলারের বেসামরিক সহায়তা দিচ্ছে ভারত। ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনারা চলে যাওয়ার পর সেখানে ভারত তার আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধি করতে এসব সহযোগিতা করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপোড়েনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র আফগান-ভারত চুক্তিকে সমর্থন জানিয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান আমেরিকান সিকিউরিটি প্রজেক্টের নিরাপত্তা বিশ্লেষক জশুয়া ফাউস্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা বড় ধরনের চুক্তি। এতে আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগ ও ভীতিও অনেক বেড়ে যাবে।’
ফাউস্ট আরও বলেন, ‘মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়ার পর সেই শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা থেকেই ভারত সেভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রেরও সমর্থন রয়েছে।’
আফগানিস্তানের সাড়ে তিন লাখ পুলিশ ও সেনাসদস্যকে তালেবান ও জঙ্গি মোকাবিলার উপযোগী করে গড়ে তুলতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ন্যাটো। আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কথা। এই যুদ্ধের ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ সমর্থন কমতে থাকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আগেভাগেই সেনা প্রত্যাহারের চিন্তা করছেন।
আফগান-সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখার দাবি করে থাকে পাকিস্তান। তারা এখন বারবার বলছে, আফগানিস্তানে ভারতের বেশি সংশ্লিষ্টতা পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে।
পাকিস্তানের আশঙ্কা, ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ফলে আফগান নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে পাকিস্তানবিদ্বেষী মনোভাব গড়ে উঠতে পারে।
তবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক মেহতা বলেন, আফগানিস্তান তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে ভারতের মতো একটি অসাম্প্রদায়িক জাতীয় বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে। এ জন্য তারা সারা দেশের বিভিন্ন জাতি, গোত্র ও ধর্ম থেকে সেনাসদস্যদের নিয়োগ করছে।
অশোক মেহতা বলেন, তারা (আফগান) পাকিস্তানে যেতে যায় না, যদিও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বারবার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। তারা নিজেদের সেনাবাহিনীকে একটি ধর্মভিত্তিক বাহিনী হিসেবে দেখতে চায় না।

No comments

Powered by Blogger.