প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এমন বিশ্বে আমরা বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। সেখানে প্রস্তুতি না নিয়ে থাকাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, আমাদেরই কাছে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সকালের খবরে দেখলাম, হয়তো গুজব, আজকেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। কাজেই এই পরিস্থিতির মধ্যে প্রস্তুতি না নেয়াটা আত্মঘাতী এবং প্রস্তুতি নিতে হলে আধাআধি প্রস্তুতির কোনো জায়গা নেই। এটা এমন এক পরিস্থিতি, জয়ই একমাত্র অপশন। পরাজয় এখানে কোনো অপশন হতে পারে না। কাজেই আমাদের প্রস্তুতি কতো উচ্চপর্যায়ে নিতে পারি, তার চেষ্টা থাকতেই হবে। গতকাল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বীরউত্তম এ কে খন্দকারে বিমান বাহিনীর ‘আকাশ বিজয়’ মহড়া পর্যবেক্ষণ শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অনেকের মতো আমিও যুদ্ধবিরোধী মানুষ। পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক, এটা কামনা করি না। যুদ্ধ প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। কাজেই যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়েও একটা ঘোরতর আপত্তি। যুদ্ধ একটি ব্যয়বহুল ব্যাপার উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের অর্থনীতি দুর্বল অবস্থায় আছে। এমনিতেই বাংলাদেশ মজবুত অর্থনীতির দেশ হয়ে গড়ে উঠতে পারেনি। তার মধ্যে বিগত সরকারের যথেচ্ছাচারের কারণে যা ছিল তাও লুটপাট হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সামগ্রিক স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে হবে। শান্তির দিকে হাত বাড়িয়ে রাখতে হবে সবসময়। কিন্তু প্রস্তুতিও থাকতে হবে। বিমান বাহিনীর মহড়া দেখে খুবই ভালো লেগেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো আমরা সিনেমাতে দেখি। বাস্তবে দেখার খুব একটা সুযোগ হয় না। আজকে আপনাদের কারণে সেটা বাস্তবে দেখলাম। সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে মূল্যায়নে ড. ইউনূস বলেন, এতে আমাদের সাহস বাড়ে। শুধু যুদ্ধের সাহস না- আমাদেরই ছেলেমেয়েরা এমন দুর্দান্তভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে, কঠিন সমস্যার মোকাবিলা করতে পারে, এটা দেখে বুক ভরে যায়। তিনি বলেন, শান্তির দিকে আমাদের হাত বাড়িয়ে রাখতে হবে সবসময়। কিন্তু যুদ্ধের প্রস্তুতিতেও থাকতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমান বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্ব আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি উল্লেখ করে বিমান বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিমান বাহিনীর সকল সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, বিমান বাহিনীতে ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার, পরিবহন বিমান, রাডার সংযোজনের জন্য সরকার বিমান বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে। প্রফেসর ইউনূস বলেন, বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যগণ নিয়মিতভাবে বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও অনুশীলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে যুগোপযোগী করতে সদা সচেষ্ট রয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা স্বাধীনতা যুদ্ধে বিমান বাহিনীর অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে তিনি ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের শহীদদের কথা স্মরণ করে বলেন, শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী এবং সাধারণ জনগণ যারা দেশের অধিকারের প্রশ্নে জীবন ও রক্ত দিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তাদেরকে স্মরণ করছি। তিনি দেশের বিমান বন্দরসমূহের সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমান বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। মহড়া কেবল একটি সাময়িক অনুশীলনই নয় উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমান বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে। নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ও পেশাগত উৎকর্ষের জন্য মহড়ায় অংশগ্রহণকারীদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আজকের এই অনুশীলন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আত্মবিশ্বাস, প্রস্তুতি এবং অর্পিত দায়িত্ববোধের বাস্তব রূপায়ণ। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি জাতির আস্থা ও ভালোবাসা অটুট থাকুক- এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। এর আগে বিমান ঘাঁটিতে এসে পৌঁছালে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। অনুষ্ঠানস্থলে বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এসময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
mzamin

No comments

Powered by Blogger.