বৈধ গর্ভপাতের জন্য টার্গেট নারী চিকিৎসক

গর্ভপাতবিরোধী কর্মীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন পোল্যান্ডের একজন শীর্ষস্থানীয় নারী চিকিৎসক। এতে রোগীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তিনি। এ ছাড়া হাজার হাজার হত্যার হুমকি পাচ্ছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। গিজেলা জাগিয়েলস্কা নামের ওই নারী চিকিৎসক দক্ষিণ-পশ্চিম পোল্যান্ডের ওলেস্নিকা শহরের একটি হাসপাতালে কাজ করেন। যেখানে বৈধ গর্ভপাতের নিয়ম আছে। গিজেলা বলেন, ১৭ই এপ্রিল ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য উগ্র ডানপন্থি  গ্রেগর্জ  ব্রাউনের নেতৃত্বে একদল উগ্রবাদী হাসপাতালে যায়। তারা তাকে অফিস থেকে বের হতে বাধা দেয়। তিনি আরও  বলেন, ব্রাউন বার বার নিজেকে খুনি দাবি করতে থাকেন এবং বলেন, আমি একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি। পুলিশের উচিত আমাকে গ্রেপ্তার করা। তিনি গিজেলাকে ধাক্কা দেন এবং তাকে অফিসে আটকে দেন। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ওই নারী চিকিৎসক বলেন, পুলিশ ডাকা হলেও তারা বিশৃঙ্খলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উল্লেখ্য, ব্রাউন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একজন সদস্য। এর কারণে তিনি দায়মুক্তি পান এবং তাকেও আটক করা যায়নি। পোল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র পুলিশকে জানান, পুলিশ ওই হাসপাতাল ও নারী চিকিৎসকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। এদিকে ব্রাউনের এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে পোল্যান্ডের সরকার। উক্ত ঘটনার পর থেকে অনেকে ওই চিকিৎসককে কটাক্ষ করছেন। এ ছাড়া হাসপাতালটি বোমা হামলার হুমকির শিকার হচ্ছে। ডা. গিজেলা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমি অনেক মেসেজ পেয়েছি। আমাকে নিয়ে অনেক পোস্ট ও আমার রক্তমাখা ছবি দেখতে পাই। যার ক্যাপশনে লেখা ছিল- ‘খুনি’। আমার ব্যক্তিগত ঠিকানা অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়। কিছু মানুষ আমার বাড়ির সামনে ভিড় জমাতে চান। তিনি আরও বলেন, পুলিশ তাকে কঠোর সুরক্ষার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ হাসপাতালে বেশির ভাগ মানুষ রোগীদের স্বজন। তারা রোগীদের কাছে আসে। এটি তাদের জন্যও একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি হতে পারে। পুলিশ অবশ্য ওই চিকিৎসককে বিশেষ নম্বর দিয়েছে। যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে ওই নম্বরে কল করে পুলিশের সাহায্য নিতে বলা হয়েছে। মূলত এক নারীর করা মামলার ভিত্তিতে ওলেসনিকা হাসপাতালে ওই ঘটনার সূত্রপাত হয়। তার গর্ভে থাকা সন্তানের ভ্রুণে গুরুতর অস্বাভাবিকতা দেখা  দেয়ার পর ওই নারীর গর্ভপাত করা হয়। কাজটি করেন ডাক্তার গিজেলা। তিনি বলেন, অন্য একটি হাসপাতাল গর্ভে থাকা শিশুর অবস্থা নির্ণয় করতে ভুল করে। এ কারণে ওই নারীকে দেরিতে গর্ভপাত করতে হয়। ইউরোপের মধ্যে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে পোল্যান্ড সবচেয়ে কঠোর কয়েকটি নীতি অনুসরণ করে। দেশটিতে ধর্ষণ ও মায়ের জীবন সংকটাপন্ন এমন পরিস্থিতিতেই শুধু গর্ভপাত করা যায়। প্রধানমন্ত্রী ডনাল্ড টাস্কের জোট অবশ্য ২০২৩ সালে ক্ষমতায় আসার পর গর্ভপাতের আইন সহজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধে তার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়।
mzamin

No comments

Powered by Blogger.