ভারতের ১৭২টি, পাকিস্তানের ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্র: পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি কতটুকু? by হান্না জোস এবং প্যাট্রিক মার্টিন
‘এখন আঘাত করার সময়’
এবিসি উভয় পক্ষের বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেছে। তাদের বেশিরভাগই বলেছেন, সামরিক জবাবের সম্ভাবনা খুব বেশি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল অফিসার রাজ শুক্লা বলেন, পেহেলগাম আক্রমণ দুটি কারণে বিশেষভাবে জঘন্য ছিল। এটি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে করা হয়েছে। যা আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর জন্য হুমকিস্বরূপ। হামলা থেকে বেঁচে যাওয়াদের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা ধর্ম অনুযায়ী পর্যটকদের চিহ্নিত করে। পাকিস্তান কীভাবে এই হামলায় জড়িত সে সম্পর্কে ভারত এখনও কোনও প্রমাণ দেয়নি।
পাকিস্তানের একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং ভাষ্যকার আম্বার শামসি বলেন, ভারতের অভিযোগ ‘স্পষ্টতই একটি প্যাটার্নকে অনুসরণ করে করা। এ বিষয়ে আমাদের আগের সাবেক প্রধানমন্ত্রীরা বলেছেন। সমস্যা হলো এবারের অভিযোগটি সেই একই প্যাটার্নের উপর ভিত্তি করে। এ বিষয়ে দৃঢ় প্রমাণ নেই। তবুও গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ইয়ান হল পাকিস্তানের অস্বীকার করার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বেশ ভালো প্রমাণ আছে যে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠান এবং সামরিক বাহিনীর কিছু অংশ এই গোষ্ঠীগুলির সাথে ঘনিষ্ঠ। এ বিষয়ে পাকিস্তানের যুক্তি ক্ষীণ। কিন্তু ভারত বেশ আগে থেকেই আঙুল তোলার প্রবণতা দেখিয়েছে। নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ‘ভারতের প্রতিক্রিয়ার ধরণ, লক্ষ্য এবং সময় নির্ধারণের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা’ রয়েছে।
কিন্তু এটি এমন এক সংকট, যা রক্তাক্ত হতে পারে। এর ধারা দীর্ঘও হতে পারে। এ কথা বলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল শুক্লা। ভারতীয় অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক ভাষ্যকার অজয় শুক্লা বলেন, উভয় দেশই কঠিন অবস্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, এই উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য কিছু না থাকলে, মুখ বাঁচানোর উপায় না থাকলে, অন্য কারো কিছু করার ক্ষমতা খুব কম।
এটা কি পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হবে?
অধ্যাপক ইয়ান হল একমত যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক প্রতিশোধ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেই প্রতিক্রিয়ার প্রকৃতি হবে অভূতপূর্ব। তিনি বলেন, আমি আশা করছি এবার আমরা আবার নতুন কিছু দেখতে পাব। তারা সমুদ্রভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার চেষ্টা করতে পারে। কারণ পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে (কাশ্মীরে) খুব সাবধানতার সাথে নজর রাখছে। আমরা যা কিছু দেখব তা মূলত একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচলিত সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা থাকলেও পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা নেই। ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে ‘প্রথমে ব্যবহার নয়’ নীতি রয়েছে। সেখানে পাকিস্তান বলেছে- তারা ‘অস্তিত্বগত হুমকির’ সম্মুখীন হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে। দুই দেশের কাছেই তুলনামূলক পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে। ভারতের কাছে ১৭২টি এবং পাকিস্তানের কাছে ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল শুক্লা বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা বুদ্ধিমান। বিকল্প পথ খোলা রেখেও তারা ‘পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে চাইবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটা ধরে নেবে যে, পারমাণবিক যুদ্ধ খুবই অসম্ভব।
চীন অবশ্যই পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করবে। শেষ পর্যন্ত এসব বিষয় কোনও চূড়ান্ত পরিণতি ছাড়াই থেমে যাবে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, সর্বাত্মক যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। তবে তা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তিনি বলেন, উভয় দেশেরই পারমাণবিক অস্ত্র থাকার বিষয়টি একটি পূর্ণাঙ্গ সংঘাতের প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেছে। ফলে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি সীমিত।
ভারত সরকার ‘কঠিন অবস্থানে’
তবুও, বিশ্লেষকরা বলছেন নরেন্দ্র মোদীর উপর কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার চাপ বাড়ছেই। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের গবেষক সুবীর সিনহা বলেন, দেশের ভিতর যুদ্ধের জন্য মোদির প্রতি ব্যাপক সমর্থন আছে। কিন্তু তাতে ক্ষতির হবে ব্যাপক। তাই প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করা কঠিন হবে। পাকিস্তানি ভাষ্যকার শামসি বলেন, যদিও মোদি বড় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ চাপের মধ্যে আছেন, তবুও ২০১৯ সালে পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা ভারত কীভাবে প্রতিক্রিয়ায় কি ঘটেছিল তা থেকেই ইঙ্গিত মিলবে।
শামসি বলেন, আগেরবার ভারত যে পদক্ষেপ নিয়েছিল তা বেশিরভাগই প্রতীকী ছিল। খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। তাই হয়তো তারা আবারও একই রকম কিছু করবে। ভারতীয় কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, তারা পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদের সাথে যুক্ত বিপুল সংখ্যক সন্ত্রাসী, প্রশিক্ষক এবং কমান্ডারকে হত্যা করেছে। পক্ষান্তরে পাকিস্তান দাবি করেছে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে অধ্যাপক ইয়ান হল বলেন, মোদি নিজেকে একজন শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে- তিনি এই সমস্যাগুলি সমাধান করবেন। কিন্তু ভারতে এমন আক্রমণের ঘটনা ঘটতেই থাকে। সুতরাং এটি মোদী সরকারের উপর খুব সিদ্ধান্তমূলক কিছু করার জন্য আরও চাপ সৃষ্টি করে।
(অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক এবিসি নিউজের অনুবাদ)

No comments